সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলক হলেও বিএনপিকে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। ইসির পক্ষ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যও সব রাজনৈতিক দলকে বিশেষ করে রাজপথে আন্দোলনে থাকা বিরোধী দলগুলোকে আবারও আমন্ত্রণ জানাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে দলগুলোকে নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ নেবে না সাংবিধানিক এই সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
ইসি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার আইনি অধিকার ইসির নেই। তাই নিজে উদ্যোগী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না নির্বাচন কমিশন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণের জন্য আগামী অক্টোবরে বৈঠকে বসবে কমিশন। ওই বৈঠক থেকে দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে আবারও আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিমত প্রকাশের জন্য হলেও ইসির সঙ্গে বিএনপির আলোচনায় বসা উচিত।
মঙ্গলবার (৯ মে) খুলনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় পরিদর্শন ও মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, একটা জাতীয় নির্বাচনও আমরা করিনি। জাতীয় নির্বাচন যদি করতাম, সেখানে ব্যর্থতা থাকলে আপনাদের (বিএনপি) নজরে আসত, দেশবাসী বলত, বিশ্ববাসী বলত। কিন্তু সেটা তো এখনো হয়নি। সেজন্য আমরা মনে করি, উনারা (বিএনপি) একটু ইতিবাচকভাবে চিন্তা করুক, আসুক। আমরা সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাচ্ছি, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাচ্ছি। উনারা সেটা বুঝে হয়তো আসবেন, এই মুহূর্তে উনারা কী করবেন জানি না। আমার বিশ্বাস উনারা (বিএনপি) জাতীয় নির্বাচনে আসবেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই সময়ও ইসি বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা তাতে অংশ নেয়নি। নির্বাচন কমিশন ফের বিএনপিকে আলোচনার জন্য চিঠি দেয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর লেখা ওই চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনাদের নিজস্ব দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশল বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনোরূপ মন্তব্য নেই। তবে নির্বাচন কমিশন আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও মনে করে, জাতীয়তাবাদী দলের নেতাদের সঙ্গে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক না হলেও, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে।
জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ইসির আমন্ত্রণ হচ্ছে সরকারের কূটকৌশল, সরকারের নাটক। নির্বাচন কমিশন সংলাপের জন্য আমাদের চিঠি পাঠায়। আমরা বলেছি, সংকট একটাই নির্বাচন কীভাবে হবে, কোন ব্যবস্থায় হবে। নির্বাচন অবশ্যই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা বললে সেই বিষয়ে কথা হবে, অন্য কোনো বিষয়ে কথা নয়।
পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা ঠিক করার এখতিয়ার কমিশনের নেই।বিএনপির যেকোনো বক্তব্য চিঠির মাধ্যমে এলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তারা আলোচনায় এলে কী আলোচনা হবে, তা সময় বলে দেবে।
ইসিতে বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে নিজ থেকে উদ্যোগ নেবে না তার ইঙ্গিত মেলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের বক্তব্যে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দল স্বাধীন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলকে জোর করে নির্বাচনে আনার আইনি অধিকার ইসিকে দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করে তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সে সময় তিনি যেসব কথা দিয়েছিলেন তার একটাও রক্ষা করেননি। তার কথা মতোই পরে নির্বাচন কমিশন কাজ করেছে। এই নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সরকারের কথার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তাই তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। নির্বাচনী মাঠ সমতল করার জন্য যেসব করা দরকার, তারা (ইসি) সেটা করুক। জনগণের কাছে যখন মনে হবে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইসি কাজ করছে তখন অবশ্যই আমরা জনগণের কথা বলতে তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দেব।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসির আলোচনার প্রস্তাব বিরোধী দলগুলোর গ্রহণ করা উচিত। দ্বিমত প্রকাশের জন্য হলেও ইসির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার চলছে ইসি কি এগুলো দেখে না? তফসিল ঘোষণার পরই কি নির্বাচন শুরু হয়? জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি তো এখনই শুরু হয়ে গেছে। তাহলে মাঠ সমতল করার জন্য কেন ইসি উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা তো সরকারকে বলতে পারে, সংবিধান সংশোধনীর কারণে দলীয়-নির্বাহী-সংসদ প্রধান একজনই। তার নেতৃত্বে নির্বাচন হলে একদল পাহাড়ের ওপর থাকবে, আরেক দল সমতলে। তাহলে মাঠ কীভাবে দুই দলের খেলার জন্য তৈরি হলো? তারা সেটা বলবে না। এটা ঠিক, ইসি সাংবিধানিকভাবে কাউকে নির্বাচনে আনতে পারবে না। কিন্তু তারা চাইলে উদ্যোগ নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ইসিকে বিশ্বাস করে না বলেই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। আলাপ-আলোচনা ভালো। আমন্ত্রণে বিএনপি না যাওয়ায় ইসির ঘরেই পয়েন্ট গেছে। বিএনপির উচিত দ্বিমত প্রকাশের জন্য হলেও আমন্ত্রণে গিয়ে ইসির চরিত্র জনগণের কাছে আরও পরিষ্কার করা।