ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আসন্ন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এবার আর কোন ফন্দি-ফিকির, কূট কৌশলে আর কাজ হচ্ছে না। শেখ হাসিনা টের পাচ্ছেন যে, কখনো ভোট ডাকাতি কখনো বিনা ভোটে আবার কখনো রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোটাধিকার লুট করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ। এখন চরম আতংক বোধ করছে সরকার। সেজন্য বেপরোয়া নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তা, হুমকি এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে গায়েবী মামলা আর গ্রেফতার এর হিড়িকের সুষ্পষ্ট লক্ষণ আবারও এখন ফুটে উঠছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকা নিশিরাতের সরকারের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখতে পারলেও এবার আর সম্ভব হচ্ছে না, এটা আওয়ামী লীগ প্রধান ও দলের সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন। সারাদেশে জনগণের দূর্বার আন্দোলন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবানের কারণে শেখ হাসিনা কোন উপায় না দেখে এখন আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছেন।
তিন বলেন,শেখ হাসিনা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সফর করে এসে রীতিমতো প্রলাপ বকছেন। তাতে মনে হয় গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছ থেকে তাঁর দুঃশাসনের পক্ষে স্বীকৃতি পাননি। শেখ হাসিনা গত কয়েকদিন লাগাতার অজান্তেই তাঁর আসন্ন পতনের আশঙ্কা করছেন। শেখ হাসিনা নিজেই বলছেন। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কোন একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনবো না।” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দেশে রফতানী খাতের কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি সবকিছু ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকতে চান। তাঁর এই সমস্ত বক্তব্য পতনের সাইরেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি গণতন্ত্রকামী দেশ আমাদের দেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে। ঐ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সে দল সরকার গঠন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর গলা শুকিয়ে যায়। আতংকে ঘুম হারাম হয়ে যায়। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখন তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। এ কারণে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রীদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও বেসামাল। তবে এখন সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ হবে না। তাদের সামনে পরিত্রানের সোজাসাপ্টা একটাই পথ এবং তা হলো পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার তথাকথিত উন্নয়নের গল্প এখন আর দেশে বিদেশে কেউ বিশ্বাস করেনা। দেশের মতো বিদেশেও প্রত্যেকেই মনে করেন শেখ হাসিনার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই শেখ হাসিনা যে দেশেই গিয়েছেন, সেখানেই প্রতিটি দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় শেখ হাসিনাকে বারবার অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। এরপরও ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনার বোধোদয় ঘটেনি।
বরং জনগণ দেখেছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় শেখ হাসিনা সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ‘ধান ভাংতে শিবের গীতের মতো’ উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন। যা চরম বিরক্তিকর, একঘেঁয়েমি এবং তাঁর স্বেচ্ছাচারী কথাবার্তার চর্বিতচর্বণ। এখন কেবল দেশের জনগণ নয়, বিদেশীরাও জেনে গেছে যে, এই মাফিয়া সরকার মিথ্যা, প্রতারণা আর ভেল্কিবাজীর মাধ্যমে ভোটারবিহীন নির্বাচনের দিকে পা বাড়াচ্ছে।
বিএনপি’র দেশব্যাপী কর্মসূচি:
উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবী মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানী, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দূর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবী বাস্তবায়নে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ব্যতিরেকে দেশব্যাপী সকল মহানগরে বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ২৩ মে ও ২৮ মে তারিখে পদযাত্রা।