• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

টিউশন ফি নির্ধারণে লাগবে ইউজিসির অনুমোদন, বাড়ছে কোটা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

. পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন একাধিক শিক্ষাবিদ
. লাভজনক পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না পর্ষদের স্বজনদের
. শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুযোগ থাকছে না
. দরিদ্র, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাড়ছে
. বিদেশি ক্যাম্পাসে একাডেমিক কোর্স ও সনদ নিষিদ্ধ হচ্ছে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে এক-তৃতীয়াংশ রাখা হবে শিক্ষাবিদ। পর্ষদ চাইলেই বোর্ড অব ট্রাস্টিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে পারবে না। কমিটির সদস্য বা তাদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। বাড়ানো হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সুবিধাবঞ্চিতদের সুযোগ-সুবিধা ও কোটা।

 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন-২০২২ পরিবর্তনের খসড়ায় রাখা হয়েছে এসব নিয়ম। আইনটির খসড়া এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

খসড়া আইনে প্রতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিতে মোট আট শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধা, গরিব মেধাবী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। তাদের বিনা ব্যয়ে পড়ালেখার সুবিধা নিশ্চিত ও শিক্ষাব্যয়ে একটি ফি কাঠামো করে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ সংশোধনে গত ছয় মাস আগে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুককে সদস্য সচিব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহামুদা আলমকে সদস্য করা হয়। তারা এ আইনের বিভিন্ন স্থানে পরিবর্তন ও সংযোজন করে একটি খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

খসড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, দেশের কোনো স্থানে সরকারের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা ও পরীক্ষা নেওয়া ডিগ্রি এবং সনদ দেওয়া যাবে না। যদি সেটি করা হয় তবে তা অবৈধ বিবেচিত হবে। দেশি-বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমান নামে আবেদন করা যাবে না। জেলা, শহর, বিভাগ বা দেশের নয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক এ ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে আবেদন করা যাবে না। এ আইন পাস হলে অ্যালামনাইরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ রাখতে হবে। কমিশনের সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদনক্রমে এ বোর্ডের কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যাবে। প্রয়োজনে ট্রাস্টি বোর্ডে কমিশন বা সরকারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন করা হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত হতবিল হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ন্যূনতম আট কোটি, অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য পাঁচ কোটি এবং এর বাইরে হলে তিন কোটি টাকা কমিশন নির্ধারিত তফসিলী ব্যাংকে সম্পূর্ণভাবে দায়মুক্ত অবস্থায় জমা রাখতে হবে। এ তহবিলের অর্থ ও লভ্যাংশ কমিশনের সুপারিশক্রমে অনুমোদন নিয়ে তোলা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কমপক্ষে পাঁচ একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকতে হবে। তবে এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে যারা সাময়িক অনুমতি বা সনদপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সেটি কার্যকর হবে না।

শিক্ষার্থী কোটার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে শতকরা তিন শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা তার সন্তানের সন্তান, ছয় শতাংশ মেধাবী অথচ দরিদ্র, প্রত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দরিদ্র বা তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থী বা দরিদ্র বিধবা মায়ের সন্তান বা স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া দরিদ্র মায়ের সন্তানদের ভর্তির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এসব শিক্ষার্থীকে কোনো ধরনের ফি ছাড়া সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দিতে হবে। প্রতিবছর এ তালিকা পাঠাতে হবে ইউজিসিতে।

বিভিন্ন কমিটির বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ কমিটি, শৃঙ্খলা কমিটি, একাডেমিক কমিটি, পরীক্ষা কমিটি এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোনো সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভা বা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা নেবেন না। এমনকি তাদের পরিবারের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রির মূল সনদে উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যৌথভাবে স্বাক্ষরিত হতে হবে। থাকতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমোহর। সাময়িক সনদে রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের যৌথভাবে এবং নম্বরপত্র/ট্রান্সক্রিপ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত হতে হবে। দেশের আর্থ-সামজিক অবস্থার মানদণ্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষার্থী ফি কাঠামো প্রস্তুত করতে নিতে হবে কমিশনের অনুমোদন। সেটি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। শিক্ষার্থী কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির সময় যে ফি কাঠামোয় ভর্তি হবে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বাড়ানো যাবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা প্রস্তুত করে তা কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে প্রযোজ্য হবে সরকারের জারি করা সবশেষ প্রজ্ঞাপন। শিক্ষাছুটিসহ অন্য ছুটি কমিশনের নীতিমালায় নির্ধারিত হবে। আইনের কোনো বিধান বা নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অপরাধের জন্য অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। এটি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু অধ্যায়ে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছামতো টিউশন ফি নির্ধারণ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নানা ধরনের অনিয়ম ও ইচ্ছামতো পরিবর্তনের অভিযোগ পাওয়া যায়। আইনে এসব বিষয় সুস্পষ্ট না থাকায় কঠিন হয়ে যায় সমাধান করা। এসব বিষয় নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। আরও সুস্পষ্ট করা হয়েছে দরিদ্র মেধাবী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটার বিষয়টি।

তিনি বলেন, আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। এরপর আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং বা ভাষাগত সংশোধন হয়ে পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে। সংসদ থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ