প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আমরা আপনাকে বিপদে ফেলতে চাই না। আপনারা (সরকার) যেন সসম্মানে প্রস্থান করতে পারেন এবং মানুষের কাছে ভুল স্বীকার করতে পারেন, আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবি। আর মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করুন। তা না হলে যে আন্দোলনের মুখোমুখি আপনি হবেন, গত ৫২ বছরে এমন আন্দোলন কেউ কখনো দেখেনি।
সোমবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল, ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়জন করা হয়।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন ইদানীং আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্সের নামে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আসছে। বিভিন্ন পত্রিকা লিখছে যে, পাচার হওয়া অর্থ তারা (সরকার) দেশে ফিরিয়ে আনছেন। কারণ সরকারি কর্মকর্তারা যদি তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানে (আমেরিকায়) না যেতে পারে তাহলে এই টাকা সেখানে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। যে কারণে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়ে গেছে। তাও দেখবেন আওয়ামী লীগ কিছুতেই স্বীকার করবে না যে তারা খারাপ আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা স্বীকার করেছেন। তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমেরিকা চাইলে বাংলাদেশের সরকারের ক্ষমতাকে ওলট-পালট করতে পারে। অর্থাৎ আমেরিকার ভিসানীতি দৃষ্টিগোচর হওয়ার হর সরকারের হুঁশ ফিরেছে।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমেরিকান সরকার একটা ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন। এই ভিসানীতি সরকারকে পাঠিয়েছিল অনেক আগেই; ৩ মে। কিন্তু সরকার প্রকাশ করেছে দুই-তিনদিন আগে। আমি বলব এটা সরকার প্রকাশ করেনি, বরং আমেরিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করার পর আমরা জানতে পেরেছি। আমেরিকা সরকার একমাত্র বাংলাদেশের জন্যই এই নতুন ভিসানীতি তৈরি করেছে।
প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে সরকার বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে- এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের ব্যাপারে যদি একটু এদিক-সেদিক হয় তাহলে তাদের (প্রশাসনের) সন্তানরা যারা নিজের যোগ্যতায় ভিসা পেয়ে সেখানে পড়াশোনা করছেন, সে সন্তানদের দেশে ফেরত আসতে হবে। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা সরকারের পক্ষ নিয়ে ভোটের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’
গত ৫২ বছরের মধ্যে বর্তমান সরকার দেশকে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকার ভয়ংকরভাবে স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে। মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে। দেশের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে নিয়ে গেছে। এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। এই পার্লামেন্ট তথাকথিত নিশি রাতের পার্লামেন্ট। নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এই কাজগুলো ছাড়া দেশে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তা কাটবে না। এই রাজনৈতিক সংকট ভয়ংকর সংকট। রাজনৈতিক সংকট ঘূর্ণিঝড় বা কাল-বৈশাখীর চেয়েও তীব্র হতে পারে।’
গত ৫২ বছরের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে দুদু বলেন, ‘আজকে আদার দাম ৫০০ টাকা কেজি। বিএনপির আমলে যা ২০-৩০ টাকার বেশি ছিল না। বর্তমানে ৮০ টাকা কেজি মোটা চাল, যা বেগম জিয়ার আমলে ছিল ১৬ টাকা। শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন ক্ষমতায় আসলে তিনি ১০ টাকা কেজি মোটা চাল খাওয়াবেন। ১০ টাকার সে চাল এখন পাওয়া যায় না। বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকার কমে কোনও মোটা চাল নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ৩০০-৫০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে দ্রব্যমূল্যের দাম ততদিন বাড়তে থাকবে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. মেজবাহ উদ্দিন খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভাপতি সালাউদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন সরদার ও মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী।