যুক্তরাষ্ট্র-চীন দুই পরাশক্তির মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই এবারে চীন সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআই) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস। তবে বলা হচ্ছে এ সময়ে তিনি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রটিকে আরও খোলামেলা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন। এ তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা।
গত মে মাসে ফাইনানসিয়াল টাইমসের খবরে প্রকাশ হয়েছিল যে, সিআইএ প্রধান উইলিয়ামস বার্নস বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমে এ সফরটি করেছিলেন।
এমনকি এ দুই পরাশক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুর্ঘটনাবশত একটি বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলেও আশংকা থাকায় এই যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে আল – জাজিরা।
খবরে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন ও বৈঠকের জন্য শিডিউলের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
আর এই প্রেক্ষিতে সফরের বিষয়টি সামনে এসেছে।
শুক্রবার (২ জুন) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, গত মাসে বেইজিং সফরেরে সময় সিআইএ পরিচালক চীনের গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এসময় গোয়েন্দা চ্যানেলে যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত রাখার ওপর জোর গুরুত্বের পাশাপাশি তিনি চীনের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন। তবে বেইজিংয়ের কোনো রাজনৈতিক বা পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কোনো নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তার।
তবে এরকম সফর বিষয়ে সিআইএ সাধারণত আগাম কোনো ঘোষণা দেয় না। আর তাই উইলিয়াম বার্নসের চীন সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সম্প্রতি তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষ করে চীনের মানবাধিকার রেকর্ড, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এই উত্তেজনা চলে আসছে।
ওয়াশিংটন এর আগে এক অভিযোগে বলে, মস্কোকে সামরিক সরঞ্জাজমাদি দিচ্ছে চীন। অন্যদিকে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন সরকার।
ওদিকে বাইডেন প্রশাসনের কিছু সমালোচক বেইজিং ইস্যুতে ওয়াশিংটনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, চীনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যুক্ত থাকার পরও তাদেরকে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মনোভাব পরিবর্তনে ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরে আসার পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের। কিন্তু চীনের গোয়েন্দা বেলুন ভূপাতিতকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক উত্তেজনায় তা স্থগিত হয়ে যায়।
ওদিকে শুক্রবার সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা সম্মেলনে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফুর সঙ্গে করমর্দন করতেও দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের। তবে দুই পক্ষের মধ্যে এসময় আলাপ হয়নি। এর আগে লি শ্যাংফুর সঙ্গে লয়েড অস্টিনের একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে চীন।
এর আগে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইকুইপমেন্ট ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইইডি) ও সংস্থাটির পরিচালক লি’র উপর রাশিয়া থেকে মিসাইল ও জঙ্গী বিমান ক্রয়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
শনিবারের সম্মেলনে অস্টিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংলাপ অতি জরুরি যাতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত এড়ানো যায়।
এদিকে শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, নিউক্লিয়ার পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে পাশে চায় কোন পূর্ব শর্ত ছাড়া, যদিও চীনের এ ব্যাপারে অনাগ্রহ রয়েছে। সূত্র: আল-জাজিরা