• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভ রক্ষায় ডলার বিক্রি কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষায় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত দিনে ৬ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সের আয় স্থানান্তর, ব্যক্তিগত ভ্রমণ, এমনকি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য টিউশন ফি পরিশোধে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধে এ মুহূর্তে অন্তত ১০০ কোটি ডলার দরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে টাকা থাকলেও ডলার না পাওয়ায় বকেয়া পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। আবার কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণ আয় আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলেও ব্যাংক থেকে ডলার না পাওয়ায় তারা আয় নিতে পারছে না। সুযোগ পেয়েও শুধু ডলারের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক অভিযোগ আসছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রি ছাড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিক্রি হয় ১১ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে গড়ে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত দুই মাস পাঁচ দিনে বিক্রি করা হয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে বিদেশি ঋণ নিতে ৯ শতাংশের বেশি ব্যয় হচ্ছে। আবার টাকার বিপরীতে প্রতিনিয়ত ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। যে কারণে এখন যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ আসছে, পরিশোধ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে আমদানি ব্যাপক কমলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরছে না।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, আমদানি কমে আসায় বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমেছে।

চলতি হিসাবের ঘাটতিও কমেছে। তবে আর্থিক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতির কারণে সামগ্রিকভাবে কিছুটা চাপ রয়েছে। কিছুদিন আগেও ডলারে ঋণ আনতে ৫ থেকে ৬ শতাংশ খরচ হতো। এখন তা অনেক বেড়েছে। আবার টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। এ অবস্থা কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না।
ডলার সংকটের এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পটুয়াখালীর পায়রার উৎপাদন আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল কয়লা আমদানি করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে করে সারাদেশে লোডশেডিং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে নতুন করে আবার ডলার সংকটের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

জানা গেছে, গতকাল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থসহ এ হিসাব প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইএমএফের বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। এক্ষেত্রে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ রিজার্ভে দেখানো যাবে না। আবার আগামী এক বছরে যে পরিমাণ দায় পরিশোধ করতে হবে, তা বাদ যাবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে রয়েছে। যদিও আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আগামী সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়নে নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চিত্রে। সাধারণভাবে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে সবচেয়ে উদ্বৃত্ত ছিল। গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্তও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৯৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছর উদ্বৃত্ত তো নেই, উল্টো ২২২ কোটি ডলার ঘাটতিতে পড়েছে। যে কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে ৮১৭ কোটি ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ছিল মাত্র ৩১০ কোটি ডলার।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, সরকারি এলসিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেসরকারি এলসিতে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হচ্ছে।
একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সংস্থান না করে এলসি খোলার ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলো নিজ থেকেই অনেক সতর্ক। এখন শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলা প্রায় বন্ধ আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ