নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়ার উধনপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষককে এমপিও পাইয়ে দিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক। ওই শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে চার দফা আবেদন করা হয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষককে এক পর্যায়ে পদ পরিবর্তন করে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ দেখিয়েও এমপিও পাইয়ে দিতে আবেদন পাঠানো হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে। আর এর ফলে এমপিও বঞ্চিত হচ্ছেন বিদ্যালয়টির সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের এক সহকারী শিক্ষক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে মো. আনিছুর রহমান প্রথম যোগদান করেন ২০০৪ সালের ২৮ মার্চ। এর পর তাকে ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক‘ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৪ সালের ৬ জুলাই। কিন্তু সেসময় ওই বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরের পাঠদানের অনুমোদন ছিল না। এরপর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক স্তরের একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। কিন্তু তার আগেই ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরপর ২০২১ সালে নতুন ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা’ জারির পর আনিছুর রহমানের নিয়োগের পুরাতন রেজুলেশন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদনের ব্যবস্থা করেন প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন।
অন্যদিকে মো. আনিছুর রহমানের ছেড়ে দেওয়ার পর শূন্য পদে নিয়োগ পান মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস। ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ নিয়োগ পান বীর মুক্তিযোদ্ধার এই সন্তান। তবে তাকে আর সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে দেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরোর (ব্যানবেইস) ২০০৪ সালের তথ্য বলছে— নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়ার উধনপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমান। ব্যানবেইস ২০২১ এবং ২০২২ সালের শিক্ষা জরিপ ফরমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যে তার পদ দেখানো হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের মে মাসের অডিটের তথ্যেও মো. আনিছুর রহমানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখা গেছে।
বিধিবিধান অনুযায়ী শূন্য পদে নিয়োগ নিয়োগ পাওয়া মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌসকে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌসকে জানিয়ে দিয়েছেন— সহকারী প্রধান শিক্ষককে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে আনিছুর রহমানকে আগের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌসবলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষককে সামাজিক বিজ্ঞান দেখিয়ে চারবার আবেদন করেছেন। নতুন বিধিমালার কারণে এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছেন— আপনার নিয়োগ পরে, তাই আপনার বেতন পরে হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও ভয় দেখিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।’
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ নামে কোনও পদ নেই। এই পদে কখনও এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই জেনে তাকে অবৈধভাবে পুরনো নিয়োগে বহাল দেখানো হয়েছে; যা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেনও। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মো. আনিছুর রহমান আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন, এখন নেই। জুনিয়র স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ থাকে না। সে কারণে তাকে ওই পদ ছেড়ে আগের পদে (সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক) পুনর্বহাল করা হয়েছে।’
‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ পদ ছাড়ার পর মো. আনিছুর রহমানকে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, না। পূর্বের পদে বহাল হয়েছেন।’
সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌসকে এমপিও আবেদন করতে দেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (জান্নাতুল ফেরদৌস) নিয়োগ পরে, আগে আনিছুর রহমানের নিয়োগ ছিল। তাকে নতুন করে নিয়োগ করা হয়নি, সহকারী শিক্ষক পদ তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আরিফুল ইসলাম কাফি বলেন, ‘২০২১ সালের জুন মাসে আমি যখন বিদ্যালয়টির সভাপতি নির্বাচিত হই, তখনও তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেই জানতাম। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম তিনি নাকি সহকারী শিক্ষক। তাকে কে নিয়োগ দিলো, কখন নিয়োগ দিলো; সে বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন, ‘এরকম একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’