বিএনপি চট্টগ্রামকে একসময় নিজেদের ভোটের দুর্গ হিসেবে পরিচয় দিত। কিন্তু এখন বন্দর নগরীতে না নির্বাচন, না আন্দোলন কোথাও নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারছে না দলটি। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে মাঠে নামতে চায় তারা।
আজ বুধবার (১৪ জুন) বিএনপি চট্টগ্রামে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে।
দলটির নেতাদের ভাষায়, ১৫ বছর ধরে ‘ভোটাধিকার হারা’ তরুণদের সম্পৃক্ত করেই এবার দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে চান তারা। এ পরিকল্পনা থেকেই দেশের পাঁচ কোটি তরুণকে সঙ্গে রেখে সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান তারা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইদ্রিস আলী জানান, কাজীর দেউরি আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় বেলা ৩টায় সমাবেশ হবে।
এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া চট্টগ্রাম বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মো. নাসির উদ্দিন তিনজনকেই একসঙ্গে মঞ্চে রেখে এ কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি চলছে। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে তরুণদের এই সমাবেশে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে দেওয়া হয়েছে এই সমাবেশ আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব। তবে কর্মসূচির সমন্বয় করছে বিএনপি নেতৃত্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে এই সমাবেশে তরুণদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
প্রচার ও ছোট ছোট প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে তারা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন পর এ ধরনের কর্মসূচি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটাধিকার-বঞ্চিত থাকার বিষয়টিকেই তাদের সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভোটার হয়েও কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভকে কাজে লাগানোর পুরোপুরি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীর বাইরে সাধারণ মানুষকে এই সমাবেশে উপস্থিত করে তরুণদের মধ্যে এই আশার সঞ্চার করতে চান যে, জনসমর্থন তাদের প্রতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের তরুণসমাজ প্রথম ভোটার হওয়ার পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার রক্ষায় এখন থেকে তাদের সোচ্চার করতেই এ কর্মসূচি।’ তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনের যে সংস্কৃতি চালু করেছে তাতে তরুণদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। তারাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের ভোটাধিকার আদায় করবে।
ড. শাহাদাত দাবি করেন, বিগত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তার এক ভাগনে ভোট দেওয়ার জন্য দেশে আসেন। ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ইভিএমে ফিঙ্গার দেওয়ার পর ব্যালট প্যানেল পর্যন্ত যেতে পারেনি। ওখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ লোকজন তার ভোট দিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করায় তাকে হেনস্তাও করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ১৫ থানায় বিএনপির পক্ষ থেকে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। পৃথক কমিটি করা হয়েছে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকেও। নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে নিয়মিত চলছে মতবিনিময় সভা।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের যে সন্ত্রাস, শিক্ষার্থীদের এক ধরনের জিম্মি করে রাখাসহ বিভিন্ন কারণে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা তাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চাই।