আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা প্রত্যাবাসনে বাধা দিতে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে। শীঘ্রই বাংলাদেশে আশ্রিতদের মধ্যে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করবে সরকার। এ খবর জানতে পেরে মিয়ানমারে অবস্থানকারী আরসা কমান্ডাররা ক্যাম্পে তাদের সহযোগীদের সক্রিয় করে তুলছে। সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে আরসা ক্যাডাররা উখিয়া-টেকনাফ এলাকাকে বিষিয়ে তুলেছে। তাদের অত্যাচার, অপহরণ, মুক্তিপণ বাণিজ্য ও হত্যার ভয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকে সব সময়। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করে চলেছে আরসা ক্যাডাররা। যেন প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গারা অনীহা প্রকাশ করে।
রোহিঙ্গারা জানায়, আরসা প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মর জুনুনির নির্দেশে ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রেখেছে আরসা ক্যাডাররা। শীঘ্রই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে বলে শুনেছি। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে যাচ্ছে। দেশটির সরকারও রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই মাতৃভূমিতে ফিরতে শুরু করবে রোহিঙ্গারা। এই খবর জেনে আরসা কমান্ডাররা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা নেই, প্রস্তুতিরও অভাব নেই। ২০১৮ সালে সকল রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেই ডাটাবেজের যাচাই-বাছাই এখন পর্যন্ত শেষ করেনি। মাত্র ৫৬ হাজারের মতো সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে সাড়া পাচ্ছি যে, তারা রোহিঙ্গাদের নিজ ভিটেতে নিয়ে যেতে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। মিয়ানমার বলছে, অন্তত দক্ষিণ মংডু থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সেখানে ফেরত নেবে। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই বহুল প্রত্যাশিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এরপর দুবার প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের অনীহায় তা ভেস্তে যায়। চলতি বছরে চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। গত ১৫ মার্চ রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করতে টেকনাফ আসে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি এক সপ্তাহ টেকনাফে অবস্থান করে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর ৫ মে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে-তা দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে যায় ২০ জন রোহিঙ্গা নাগরিকসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারপর প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে ২৫ মে ফের মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। তারপর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরে যায় প্রতিনিধি দলটি। রোহিঙ্গাদের শর্ত আর মিয়ানমারের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসনের এ উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।
রবিবার ফেসবুকে একটি আইডি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করা হয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বলছে, মিয়ানমারে ফিরে গেলে মগ ছাড়াও আরসা ক্যাডাররা আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করবে। কারণ মিয়ানমার সরকারের কিছু কর্মকর্তা ওইসব আরসা ক্যাডারদের লালন করে চলেছে।