বাংলাদেশকে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশে ব্যবসা করা মার্কিন কোম্পানিগুলো যাতে তাদের মুনাফা দ্রুত ফেরত নিতে পারে সে বিষয়ে সরকারকে তাগিদ দিয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের যাপিত জীবনের মানোন্নয়নে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে একটি নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করার জন্যও সরকারকে তাগিদ দিয়েছে দেশটির বাণিজ্য দফতরের প্রতিনিধি।
গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনার জন্য গঠিত সহায়তা ফোরাম টিকফার বৈঠকে এসব বিষয়ে তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন তহবিল থেকে অনুদান পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাম তালিকাভুক্তিকরণ, এনার্জি খাত ছাড়াও বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ও শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বিনিয়োগ এবং এলডিসি উত্তরণে ডব্লিউটিওর সুবিধা অব্যাহত রাখতে মার্কিন সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ।
এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর-এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ক্রিস্টোফার উইলস।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এবার বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নতকরণের পাশাপাশি শ্রম ও মেধাস্বত্ব ইস্যুতে জোর দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি, যারা এ দেশে বিনিয়োগ করেছে-তারা তাদের মুনাফা ফেরত নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছে ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা। তারা বলেছে, মার্কিন কোম্পানিগুলো যেন মুনাফা দ্রুত ফেরত নিতে পারে সে বিষয়ে বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে মেধাস্বত্ব ও পেটেন্ট আইন কার্যকর করার বিষয়েও চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের দিকে যাচ্ছে। ফলে দেশটির এখন থেকেই মেধাস্বত্ব ও পেটেন্ট আইনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই ইস্যুগুলো দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে ইউএসটিআর প্রতিনিধি বলেছেন, সরকার বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করলে আরও বেশি মার্কিন বিনিয়োগ আসবে। তৈরি পোশাক খাতে শ্রম পরিবেশ উন্নয়নেরও তাগিদ দিয়েছে ইউএসটিআর। বিশেষ করে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার সুবিধা দেওয়া, শ্রম আইনের সংশোধন করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে টিকফার বৈঠকে। এ ছাড়া বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে দেশের কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর চাপ দিয়েছে ইউএসটিআর। এ জন্য তারা দ্রুত একটি নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণার তাগিদ দিয়েছেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট হওয়ায় কয়েকটি মার্কিন কোম্পানির মুনাফা ফেরত নিতে বিলম্ব ঘটছে। আমরা বলেছি, খুব দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। শ্রমিকদের নতুন ওয়েজবোর্ডের বিষয়ে আমরা সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে বলেছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা হতে পারে। তবে বেতন-ভাতা বাড়ানোর ঘোষণার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে নেওয়া তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর ঘোষণাও দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের। আমরা বলেছি, পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো যদি এ দেশে থেকে নেওয়া পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি করে তবে সরকারের জন্য শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কাজটি সহজ হবে।
বাংলাদেশের চাওয়া প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব জানান, চলতি বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। আগে দেশটি থেকে তুলা আমদানির পর ওই তুলা চট্টগ্রাম বন্দরে ছাড়ের আগে ধুমায়িতকরণ করার শর্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সেই শর্ত প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ। আমরা বলেছি, তাদের দেশ থেকে তুলা আমদানি করে আমরা যে পোশাক বানাব- ওই পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে তারাও যেন আমাদের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়।