গণপূর্তের ঠিকাদার সেলিম রেজা। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর শ্যামলীতে। গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। গত শুক্রবার রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তার স্ত্রী তানজিনা আক্তার (৩৫)। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিউতে নেওয়া হয়। তখন তার রক্তের প্রয়োজন হয়। গত রবিবার রাতে রক্ত নিয়ে তানজিনার কাছে যেতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা টাকা দাবি করেন সেলিম রেজার কাছে। এর আগেও এই পরিবার ৩-৪ বার আনসার সদস্যদের টাকা দেয়। এ সময় সেলিম রেজার ছেলে নয়ন বলেন, ‘এর আগেও আপনাদের টাকা দিয়েছি, আর কতবার দেব’।
শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে এক আনসার সদস্য নয়নকে থাপ্পড় দিলে তার সঙ্গে মারামারি হয়। পরে ওই আনসার সদস্যের বাঁশির শব্দে ২০ থেকে ৩০ জন আনসার সদস্য জড়ো হয়ে নয়নের ওপর হামলা চালায়। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে বাবা সেলিম ও বোন সেলিনা আক্তারসহ পুরো পরিবারের ওপর হামলা চালায় আনসার সদস্যরা।
সেলিম রেজা দাবি- তাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, তখন সিসিউতে তানজিনার পাশে ছিলেন তার শাশুড়ি। সেখানে যে চিকিৎসক ও নার্সরা ছিলেন তারা তার শাশুড়ির সামনেই তানজিনার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেন। তার মেয়ে ভেতরে গিয়ে দেখে তার মা ছটফট করছে। সে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারকে (জুলফিকার আলী) জানায়। ডাক্তার দৌড়ে গিয়ে তার স্ত্রীর বুকে অনেকবার চাপ দেন, এ ছাড়া বিভিন্ন চেষ্টা চালান কিন্তু তাতে লাভ হয়নি- তার স্ত্রী সেখানেই মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহত তানজিনার মেয়ে সেলিনা আক্তার রবিবার রাতেই শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর তারা গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দীনে চলে যাওয়ায় মামলার আর অগ্রগতি হয়নি। তানজিনার কুলখানি, মিলাদ শেষ করে আজ শুক্রবার তারা ঢাকায় ফেরেন।
সেলিম রেজা বলেন, কারা হামলা করেছে আমি তাদের চিনি না, নাম জানি না। কিন্তু হাসপাতালের সিসিটিভিতে ফুটেজ আছে। পুলিশ সেই ফুটেজ সংগ্রহ করলেই সব পরিষ্কার হবে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ ডিলিট করে দিতে পারে। ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে আজ পর্যন্ত কেউ তার বা তার পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।
তিনি বলেন, আমার বড় ছেলের হাত ভাঙা, একটু পরপর মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে। ছোট ছেলেটা বেশি অসুস্থ। ও ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না। ওকে আনসাররা বুট দিয়ে পাড়াইছে। তার গায়ে এখনও অনেক ব্যথা।
মারধরের শিকার তানজিল হাসান নয়ন বলেন, ‘আমাকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়েছে বুকে, পিঠে। আনসাররা বুট নিয়ে গায়ের ওপরে উঠে পাড়াইছে। আমাকে বাঁচাতে আমার বোন এসে আমার ওপরে পড়লে তাকেও আনসার সদস্যরা মারধর করে। এ সময় আনসার সদস্যদের সঙ্গে হামলায় যুক্ত হয় অ্যাম্বুলেন্স চালকেরাও’।
নিহত তানজিনা আক্তারের বোন আসমা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমার বোন তার সন্তানের ওপর মারধরের খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমরা বোন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার রক্তের দরকার ছিল। কিন্তু রক্ত জোগাড় করে নিয়ে এলেও টাকা না দেওয়ায় আনসার সদস্যরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। আমার বোন মারা গেছে শুনে আমি হাসপাতালে এলে আমাকেও ঢুকতে না দিয়ে উল্টো মারধর করে, যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাবেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই’।
তবে এ বিষয়ে জানতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দীনের ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।