শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিবির কর্মী সন্দেহে এক ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষে আরেক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শিবির সন্দেহযুক্ত সাখাওয়াত সাকিব নিলয়ের কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়ার অনুসারী শফিউল রাব্বি একাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনার পর হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের দেয়া তালা খুলে নতুন তালা লাগিয়ে কক্ষটি সিলগালা করেছে।
শিবির সন্দেহে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সাখাওয়াত সাকিব নিলয় রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাহপরাণ হলের ৪২১ নং কক্ষে থাকেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলে ৪২১ নং কক্ষে তালা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগের তালা ভেঙ্গে সিলগালা করা হয় এই কক্ষকে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাখাওয়াত সাকিব নিলয়কে অভিযুক্ত করে একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। ওই রেকর্ডটিতে একজনকে শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে আলাপ করতে শোনা যায়। এই অডিও রেকর্ডের জের ধরে শাখা ছাত্রলীগের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়ার অনুসারী নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শফিউল রাব্বি এর নেতৃত্বে লোকপ্রশাসন বিভাগের মারুফ ও আবু বকর, বিএমবি বিভাগের লোকমান হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সজিব দেব নাথসহ ছাত্রলীগের ৩০/৩৫ জন নেতাকর্মী তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান, ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট বডি আলোচনা করে ছাত্রলীগের ঝুলানো তালা খুলে সেই রুমকে সিলগালা করে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রশাসন এবং ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের জিম্মায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সাখাওয়াত সাকিব নিলয় বলেন, আমি একজন ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী। আমার নামে চক্রান্ত করে আজিজুল ইসলাম সীমান্তের নির্দেশে কেউ একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। যে এটি ছড়িয়েছে তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এই অডিও রেকর্ড এর সাথে আমার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে যদি এর সত্যতা পায় তাহলে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তা মেনে নিব।
কক্ষে তালা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শফিউল হক রাব্বি বলেন, আমার নেতৃত্বে কোনো কক্ষে তালা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খলিল, সজিব ও প্রভোস্টকে জিজ্ঞেস করেন। আমি এর কিছু জানি না।
এ বিষয়ে জানতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান রুমে তালা ঝুলানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শাহপরান হলের ৪২১ নং রুমের নিলয় নামের এক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাগে ফুষে উঠে এবং তার আশ্রয়দাতা এবং তার রুমমেট সীমান্তসহ তাকে খুঁজতে রুমে যায়। সেখানে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এরপর আমরা প্রক্টর হল প্রভোস্টদের নিয়ে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আর ৪২১ নং রুমে ছাত্রলীগের কেউ তালা দেয়নি, এটা হল প্রশাসন দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, একটি বিষয় নিয়ে হলে ঝামেলা হয়েছে। বিষয়টি শোনামাত্র হলে গিয়ে প্রভোস্ট বডির সাথে কথা বলে এই রুমে সিলগালা করা হয়েছে। আর তার বিষয়ে যে অভিযোগটি এসেছে এটিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।