• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪

আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রমজানে যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয় দেশে সেসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। রমজানের পণ্যের কোনও সংকট নেই। কেউ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার (২১ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের জরুরি সভা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।অর্থমন্ত্রী বলেন, যেভাবে প্রাইস লেভেলকে ধরে রাখা যায়, সে কাজগুলোই সরকার করছে। আমরা মনে করি, চিন্তার কোনও কারণ নেই। দরকার হলে আমরা অনেক কঠোর পদক্ষেপের দিকে চলে যাব। দরকার হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দিকে যাব, কাউকে ছাড় দেব না।

এখনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, না। এখনও হয়নি।

তাহলে জরুরি সভার কারণ কী? সাংবাদিকরা এমন পাল্টা প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর ন্যাচারালি সবাই তো বলছেন কী করছেন, কী করলেন?

আপনাদের টার্গেট কি শুধু রমজান? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু রমজান না, রমজান নিয়ে চিন্তা তো আছে মানুষের মধ্যে। সেজন্য এখানে আমরা বসেছিলাম।

চালের দাম বাড়ানোর পর সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আলোচনা করছি, দেখছি। দেখেন আপনারা, ইতোমধ্যে দাম কমেছে।

ব্যবসায়ীরা এখন ট্রাক নিয়ে খেত থেকে আলু তুলছে। তাদের লাভ হচ্ছে। বাজারে মনোপলি হচ্ছে, সেখানে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অ্যাকশনে তো যাচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম কতদিনের মধ্যে কমবে, এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেভাবে এটা কখনোই বলা সম্ভব না। আমদানিকে প্রাধান্য দেবেন কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, দরকার হলে আমদানি করতে হবে, এখনও তো এরকম কিছু হয়নি।

এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, এই বসাটা একটি স্বদিচ্ছার প্রকাশ। আপনাদের-আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা সরকারের একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার, দেশের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। যেন সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারসাজিতে কিছু কিছু জিনিস ব্যত্যয় ঘটেছে, সেটা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজারে কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগী আছে, কিছু মতলববাজ যারা কারসাজি করে, তারা আছে। তাদের সৃষ্টি কৃত্রিম সংকটের কারণে আমরা মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়ি। সুতরাং, আপনারা আজ থেকে আশ্বস্ত হতে পারেন, যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে আশা করি শিগগির আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

কারা বাজারকারসাজি করছে তাদের শনাক্ত করা গেছে কি না? এমন প্রশ্নে আব্দুর রহমান বলেন, বের অবশ্যই করছি। সেই পূর্ণাঙ্গ বের করার ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা সেই ব্যাপারে আলোচনা করছি। চিহ্নিতকরণ করাটা যখন সুনির্দিষ্ট করা যাবে, তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, লাইসেন্স বাতিল করা হবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ছাড়পত্র বন্ধ করা হবে।

কীসের ভিত্তিতে আপনারা বলছেন, রমজানের পণ্যের সংকট নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, সমস্ত পরিসংখ্যান আছে, কোনও কিছুতে শর্টেজ নেই। টেকনিক্যাল রিজনে সেই পরিসংখ্যানের বিস্তারিত আপনাদের দিতে চাই না। অনুমাননির্ভর এক জিনিস, সন্দেহ করা এক জিনিস; সন্দেহের তালিকা এক জিনিস, সেটিকে সুস্পষ্ট করা আরেক জিনিস। সেই সুস্পষ্টকরণ সম্পন্ন হলেই চিহ্নিত করা যাবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। এজন্য একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

ডলার সংকট নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, রমজানের যেসব পণ্য আমদানি করি, গত বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৮টি প্রোডাক্টের যত এলসি হয়েছিল; এবার তার থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি এলসি হয়েছে। এলসি ওপেন করার সমস্যা ঠিক না। পণ্যগুলো সময়মত দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। কোনও মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সমস্যা না করলে দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। পণ্যের কোনও ঘাটতি হবে না।

রিজার্ভ বাড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা দেখছেন, আমাদের যারা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স তাদের সঙ্গে মাল্টিকারেন্সি অ্যাপ্রোস গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু ডলার দিয়ে তো আমরা করছি না।

বেসরকারি খাত সংকটের মধ্যে আছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কি চলতে পারছে, আপনি কী মনে করেন? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট সেক্টর তো প্রাইভেট সেক্টর। সরকার প্রণোদনা ছাড়া আর মাল্টিপল অ্যাপ্রোচেস এটা ছাড়া তো অন্য কিছু করা যায় না। তবে, ব্রড সেক্টরসগুলো তো আন্ডার কন্ট্রোলড আছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রমজানকে ঘিরে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রমজানে বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার যে কোনো উদ্যোগ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ বিষয়ে রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তারই অংশ হিসেবে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ