প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য এসেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪ জন চাকরি নিয়ে বিদেশ গেছেন, যা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের থেকে ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
“জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিটেন্স কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের চেয়ে ২০০৬-১৭ অর্থ বছরে রেমিটেন্স ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম এসেছে।”
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটার টান চলছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। তারপর থেকে তা কমছে।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে, যা ছিল আগের ছয় অর্থ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন সরকারের মন্ত্রীরা। অন্যদিকে রেমিটেন্সের উৎস দেশগুলোর অর্থনীতির নাজুক অবস্থার কথা বলে আসছে আইএমএফ।
রেমিটেন্স কেন কমেছে- এপ্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটা কমার বড় কারণ হচ্ছে সরকারি চ্যানেলে লোকজন কম টাকা দিতে চাচ্ছে, হয়ত এটা অন্য ফর্মে চলে আসছে।”
দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। এজন্য রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যাংক মাশুল তুলে দেওয়া হয়েছে।
রেমিটেন্স কমলেও রপ্তানি আয় বাড়ার তথ্য এসেছে বার্ষিক প্রতিবেদনে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৪ দশমিক ৮৪৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়, যা তার আগের অর্থ বছরের থেকে এক দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
কর আদায়ও বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আদায় হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের সাত দশমিক সাত শতাংশ বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় সমাপ্তিযোগ্য ৩৪১টি প্রকল্পের মধ্যে ৩১২টির কাজ শেষ হয় বলে জানান শফিউল আলম।
“২০১৫-১৬ অর্থ বছরের থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয়ের পরিমাণ ২০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বেড়েছে।”
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের গম, ভুট্টা, আলু, পেয়াজ, পাট, শাকসবজি, চিনি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং কয়লার প্রকৃত উৎপাদন বেড়েছে বলেও মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ৪৪৩ মেগাওয়াট বেড়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪৪ হাজার ৪৯৭ কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং ৫৪৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ছবি: পিএমও
ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরে সচিব বলেন, “এরসঙ্গে এমআরটি লাইন-৬ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্ধারিত সময়েই চালু হবে বলে আমরা আশা করছি। এর অংশ বিশেষ ৩১ দশমিক ২০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এমআরটি হিসেবে পাতাল রেল নির্মিত হবে।”
শফিউল জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৬ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রেল লাইন মেরামত করা হয়েছে। নতুন নির্মাণ করা হয়েছে ৪৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, ৪৭টি নতুন রেলসেতু ও ১০টি স্টেশন। এছাড়া ২২টি রেল সেতু পুননির্মাণ এবং ৬টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে।
“বিআইডব্লিউটিএ গত জুন মাস পর্যন্ত ২৭৬ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং শেষ করেছে। বিআইডব্লিউটিসি ৪৮টি যাত্রীবাহী জাহাজ, ৫০টি ফেরি, ৪০টি কার্গো জাহাজ এবং ৫৩টি সহায়ক জাহাজের সমন্বয়ে তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় রোডে নিরাপদ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে।”
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন
মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭, এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শফিউল বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি পুরনো, এটাকে আইনি কাঠামো দেওয়ার জন্য নতুন আইন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মতোই, পরিচালনা পর্যদ, একাডেমিক কাউন্সিল আছে।
“এই ইনস্টিটিউট যুবকদের প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম প্রণয়ন, যুবককর্মের উপর উচ্চতর গবেষণা ও মূল্যায়ন, সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন এবং একাডেমিক ডিগ্রীর পাশাপাশি ডিপ্লোমা সদনও দিতে পারবে।”
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য একটি নির্বাহী কাউন্সিল থাকবে জানিয়ে শফিউল বলেন, এই কাউন্সিলের প্রধান হবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব। তার সঙ্গে আরও ২০ জনকে নিয়ে মোট ২১ সসদ্যের এই কাউন্সিল তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে।
“এই কাউন্সিলকে সহায়তা করতে একটি একাডেমিক কাউন্সিল থাকবে। একাডেমিক কাউন্সিলের প্রধান হবেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক।”