• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন

মেট্রোরেল : কোচ বাড়িয়ে চাপ সামাল দেওয়ার উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে কোচের সংখ্যা ছয়টি থেকে বাড়িয়ে আটটি করা হচ্ছে।

রাজধানীর মেট্রোরেল বাস্তবায়ন ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল মনে করছে, এসব উদ্যোগে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা নামার সমস্যা কমবে। ভিড়ের কারণে এখনও যারা মেট্রো এড়িয়ে চলছেন, তারাও মেট্রোমুখী হবে। এতে সড়কে চাপ আরো কমবে।

এখন পিক আওয়ারে প্রতি ১০ মিনিটে এবং অফ পিক আওয়ারে ১২ মিনিটে একটি করে ট্রেন আসে। ডিএমটিসিএল বলছে, এই সময় কমিয়ে আনার চেষ্টাও আছে তাদের। সেই সঙ্গে রাত পৌনে ৯টার বদলে ১১টা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

ভয়াবহ যানজটের নগরে মেট্রোরেল দেখিয়েছে আশার আলো। মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব নেমেছে ১০ মিনিটে, মতিঝিলের দূরত্ব নেমেছে ২০ মিনিটে।

এর ফলে বাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ছেড়ে এই পথের যাত্রীরা এখন মেট্রোর দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু দিনের একটি বড় সময়েই স্টেশনে ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রীদের। পিক আওয়ারে কখনো তিনটি, কখনো তার চেয়ে বেশি ট্রেন চলে যাচ্ছে, এরপর উঠার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।

এখন যে ছয়টি কোচ থাকে, তার একটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি কোচে উঠতে পারে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন। তবে দুই দিকে ইঞ্জিন থাকায় দুটিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন।

এই হিসাবে একটি ট্রেনে একসঙ্গে উঠতে পারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০০ জনের মতো। দুটি কোচ বাড়ানো হলো সেটি ছাড়িয়ে যাবে তিন হাজার।

ডিএমটিসিএল এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইফতিখার হোসেন বিডিনিউজ বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে দিন দিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব বিষয় চিন্তা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বর্তমানে ছয় কোচের যে সেট পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে দুটি কোচ যুক্ত করে আট কোচের সেটে পরিচালনা করা হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

বাড়বে সময়, ট্রেনের সংখ্যা
বর্তমানে সকাল ৭টা ১০ থেকে সাড়ে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পিক আওয়ারে ট্রেন চলছে ১০ মিনিট পর পর। মাঝে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফ পিক আওয়ারে ট্রেন আসছে ১২ মিনিট পরপর।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন যখন সকাল ৭টা ১০ থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চলত, তখন দিনে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার পর্যন্ত যাত্রী চলাচল করত। গত এক সপ্তাহে দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় আড়াই লাখ ছুঁয়েছে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তা ইফতিখার হোসেন বলেন, “প্রকল্পের প্রস্তাবনায় যেসব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল তাতে যেমন প্রতি ৫ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া, আটটি কোচের সমন্বয়ে একেকটি ট্রেনসেট করা এবং রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন, তার সবই করা হবে

কোচের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া অন্য দুটি লক্ষ্য পূরণে কয়েক মাস সময় লাগবে। এমআরটি-৬ এর জন্য এখন ৬ কোচের ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে। কোচের সংখ্যা আটটি করা হলে সেটের সংখ্যা নেমে আসবে ১৮টিতে।

এক রুটে ৯টি করে সেটের মধ্যে একটি হাতে রাখা হয় জরুরি অবস্থার জন্য। বাকি আটটি সেট দিয়ে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন চালানো যাবে কি না, এ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

ভোগান্তি এড়াতে এমআরটি পাসে ঝুঁকছে যাত্রীরা
মেট্রোরেলের টিকিট কাটার দুটি পদ্ধতি আছে। প্রতিটি যাত্রার জন্য অস্থায়ী পাস যেমন আছে, তেমনি ১০ বছর মেয়াদি এমআরটি পাসও আছে।

লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেনার ঝামেলা এড়াতে যাত্রীরা এখন এমআরটি পাসের দিকে ঝুঁকছে ।

এই পাস থাকলে বারবার টিকিট কাটার দরকার নেই। পাস থাকলে স্টেশনে যে কোনো সময় তাতে টাকা ঢোকানো যায়। আসা যাওয়ার সময় সেই টাকা সমন্বয় হয়ে যায়। এই পাস থাকলে যাত্রীরা ভাড়ার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ছাড়ও পান।

গত ২০ জানুয়ারি থেকে মতিঝিল রুটে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত ট্রেন চালু হওয়ার পর অস্থায়ী পাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাদের এমআরটি পাস আছে তারা সরাসরি ট্রেনে উঠে যেতে পারছেন। ফলে তাদের যাত্রার সময় লাগছে কম।

ভাড়ায় ছাড় আর টিকিট নেওয়ায় ভোগান্তি কম বলে যাত্রীদের মধ্যে এমআরটি পাস কেনার প্রবণতাও বেড়েছে।

গত ছয় দিনে ৪১ হাজারের বেশি এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে প্রতিদিন সাত হাজারের মতো পাস বিক্রি হচ্ছে।

মেট্রোরেল পরিচালনায় মুনাফা হচ্ছে?
এখন মেট্রোরেলে যে পরিমাণ যাত্রী হচ্ছে, তা এর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। প্রকল্প যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন দিনে ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে হলে এখনকার তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে তিন গুণ হতে হবে।

কোচ, ট্রেন ও পরিচালনার সময় বাড়ালে সেই লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে না বলেই মনে করেছেন ডিএমটিসিএল এমডি (অপারেশন) ইফতেখার হোসেন।

এখন যে আড়াই লাখ যাত্রী চলছে, তাতে পরিচালনা ব্যয় উঠে আসার পর মেট্রোরেল লাভজনক হচ্ছে কিনা- এই প্রশ্নে উপপ্রকল্প পরিচালক (গণসংযোগ) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, “লাভক্ষতি সম্পর্কে এখনই কিছু জানা যাবে না। নিরীক্ষা হওয়ার পর এ বিষয়ে জানা যাবে।

তিনি বলেন, “যারা এমআরটি পাস কিনেছেন এবং রিফিল করেছেন (কার্ডে টাকা নিয়েছেন) সেই টাকা কিন্তু এখনই আমাদের বলে ধরতে পারি না। যাত্রী যতদিন রেলে চড়ে সেই টাকা খরচ করবেন না তত দিন সেই টাকা আমাদের আয় না।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ