বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি নিয়ে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে বাংলাদেশ। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে সম্প্রতি এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে ফিলিপাইন সরকারের চাহিদা অনুযায়ী সিআইডির তদন্ত রিপোর্টের সর্বশেষ অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের কাছে।
সে দেশের মিউচু্যয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্সের (এমএলএ) অনুরোধে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। সংশি্লষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি নিয়ে তদন্ত শেষ করেছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক Èব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস (বিএসপি)’।
চুরির ঘটনায় সেদেশের রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) কতটুকু জড়িত, তা শনাক্ত করা হয়েছে। সংশি্লষ্টদের দায়দায়িত্বও চিহ্নিত করা হয়েছে।
চুরির অর্থ ফেরত পেতে আইনি লড়াইয়ে এ তদন্ত রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এজন্য ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদষ্টো দেব প্রসাদ দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, সিআইডির স্ট্যাটাস রিপোর্ট ফিলিপাইনে পাঠানো হয়েছে।
তবে এ রিপোর্টে তদনে্তর কোনো উদ্ঘাটতি তথ্য নেই। সে দেশে মামলা পরিচালনার স্বার্থেই এটি পাঠানো হয়। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দাখিল করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে।
পাশাপাশি সিআইডি এ বিষয়ে তদন্ত করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কাছে এ তদনে্তর একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট (অবস্থানপত্র) চায় ফিলিপাইনের এন্ট্রি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)।
সে পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাস বরাবর রিপোর্টটি পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ এবং এমএলসিকে তা পৌঁছানো হয়েছে।
রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও বিষয়টির উলে্লখ আছে, যা গত সপ্তাহে সংশি্লষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধার সংক্রান্ত সরকারের টাস্কফোর্স বৈঠকে বিএসপির ওই তদন্ত রিপোর্ট চাওয়ার সদ্ধিান্ত হয়। এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ডিপার্টমেন্ট এবং সিআইডিকে।
সূত্র মতে, সিআইডির স্ট্যাটাস রিপোর্টে উলে্লখ করা হয়, ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। এজন্য ক্রিমিন্যাল অপরাধ, মানিলন্ডারিং ও সাইবার হ্যাকিং- এ তিন অপরাধে বাংলাদেশ মামলা করেছে।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচারকৃত ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ফিলিপাইন আদালতের আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেয়া হয়েছে। ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ বাংলাদেশকে সব ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করছে এবং ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে সরকারি আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ ফেরতে সহায়তা প্রদান করছে বলে সেখানে উলে্লখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই আরসিবিসি ৭০ হাজার ডলার (অব্যবহূত) ফেরত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।
সিআইডির রিপোর্টে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটসহ (এগমন্ট গ্রুপ) ৪টি সংস্থার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
অন্য সংস্থাগুলো হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, অর্থ পাচারে মান নির্ধারণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এশীয় প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের অবশষ্টি অংশ দ্রুত উদ্ধার ও তা ফেরত আনা এবং তদন্ত কার্যক্রমসহ বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংশি্লষ্ট কতর্ৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুইফটের মধ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেখানে ত্রিপক্ষীয় বিবৃতি জারি করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের চুরিকৃত অর্থ উদ্ধার এবং দোষীদের শাসি্তর আওতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলংকাসহ অর্থ পাচারের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের সংশি্লষ্টতার বিষয় নিয়েও সংশি্লষ্ট দেশগুলো তদন্ত করছে বলে উলে্লখ করা হয়।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির বিষয় নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত শেষ করেছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিএসপি)। এ ঘটনায় শুরু থেকে ফিলিপাইনের আরসিবিসি জড়িত ছিল। বিএসপির এ তদন্ত রিপোর্টে আরসিবিসিকে দোষারোপ করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি ঘটনা ঘটে আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকে।
কিন্তু সেখান থেকে অনলাইনে টাকা স্থানান্তর করে ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে আরসিবিসি ব্যাংককে প্রাথমিকভাবে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চুরির এ ঘটনায় আরসিবিসির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল মামলা করেছে।