যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিচার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রেণিকক্ষে তালা ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা তিন দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে চারটি তালা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগের করিডোরে অবস্থান নেন। এরপর স্লোগান দিতে দিতে প্রথমে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের অফিস এবং পরে তিনটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপাচার্য অনুপস্থিত থাকলে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যতক্ষণ না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না এবং বিচারকার্য ত্বরান্বিত করতে তারা শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়েছেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর তিন দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন। দাবিগুলো হচ্ছে-
১. অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
২. যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শান্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এরই মধ্যে শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা দিয়েছেন। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে দেখা করতে তারা রেজিস্টার ভবনে যান। কিন্তু উপাচার্য সেখানে না থাকায় তারা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তাদের বিভাগের চেয়ারম্যান ও অন্য শিক্ষকরাও ছিলেন।
তারা বলছেন, উপাচার্য তাদের আশ্বাস দিয়েছেন বিকেল চারটার মধ্যে একটি চিঠি তাদের বিভাগে পাঠাবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে আবারও ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে কিছু তথ্যপ্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন বিভাগের এক ছাত্রী। আগের দিন শনিবার প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
২০২২ সালে ওই শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রের মাধ্যমে যৌন হয়রানির একটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একই বিভাগের অন্য এক ছাত্রী। তিনিও রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করেন।
এদিকে, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর তার বিচার চেয়ে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
ওইদিন ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিপীড়নবিরোধী মশাল মিছিল’ ব্যানারে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্রনেতারা।