বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানী লাপাজে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ঘেরাও করে ফেলেছিলেন সেনাপ্রধান জুনিগার অধীনস্থ সেনাসদস্যরা। ট্যাংক দিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের মূল ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে তারা। এ সময় ভবনটির ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়।
কিছুক্ষণ পর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেষ্টিত প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন। তিনি সেনাপ্রধান জুনিগাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর্চি বলেছিলেন, ‘আমি আপনার ক্যাপ্টেন…এই মুহূর্তে সব সেনা প্রত্যাহার করুন জেনারেল।’
প্রেসিডেন্ট ও জুনিগার মধ্যে কয়েক মিনিট তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। কিছুক্ষণ পর জুনিগা পিছু হটেন, যেই ভাঙা দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন, সেই দরজা দিয়েই ফিরে যান।
অশান্ত বলিভিয়ায় দুই শতাব্দির মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। এটি মাত্র তিন ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময় আর্চি বলিভিয়ানদের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। দৃশ্যত একের পর এক সংঘর্ষে বিদ্রোহকে নিষ্ক্রিয় করেছিলেন এবং নতুন সামরিক কমান্ড নিয়োগ করেছিলেন যিনি বিদ্রোহী সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই নতুন তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। অভ্যুত্থানের বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধান জুনিগা বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট আর্চির নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতেই এমনটি করেছেন আর্চি। তবে বুধবার রাতে জুনিগার এমন দাবি অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেউ কি কখনো নিজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের নির্দেশ দেয়?’
তবে আর্চি বিষয়টি অস্বীকার করলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজ ব্লকের আইনপ্রণেতা আলেজান্দ্রো রেয়েস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইঙ্গিত, প্রমাণ এবং বিবৃতি রয়েছে যে এই (অভ্যুত্থান) পূর্বপরিকল্পিত ছিল, এমনকি নির্বাহী বিভাগের অংশগ্রহণও এতে থাকতে পারে।
আর্চি এই মুহূর্তে দুর্বল অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গ্যাস রপ্তানি হ্রাস এবং বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যে ক্রমবর্ধমান খাদ্য মূল্য, জ্বালানি ও মার্কিন ডলারের ঘাটতি, সেইসাথে তার রাজনৈতিক দলের মধ্যে গভীর বিভেদ ইস্যুতে বলভিয়ায় বিক্ষোভ চলছে।
বলিভিয়ার সান আন্দ্রেস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্কলিন পেরেজা বলেছেন, ‘বলিভিয়া একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত, তবে সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক। সরকার খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এর নিজস্ব দলের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের সাথে ক্ষমতার তিক্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন আর্চি। অথচ ২০২০ সালে মোরালেসই আর্চিকে নির্বাচিত করতে সহায়তা করেছিলেন। যুক্তরাজ্য-শিক্ষিত অর্থনীতিবিদ আর্চি মোরালেসের অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং মোরালেসের পরে তাকে দলের প্রার্থী করেছিলেন। সম্প্রতি দুজনই জানিয়েছেন, তারা আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন। বুধবার আর্চির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার নিন্দা জানানোর প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে মোরালেস ছিলেন অন্যতম।
তবে শনিবার বলিভিয়া টিভির এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিওতে সমর্থকদের সঙ্গে রসিকতা করে মোরালেসকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি জানি না এটি কী ধরণের অভ্যুত্থান? শূন্য হতাহত, শূন্য গুলি, মৃত্যুহীন একটি অভ্যুত্থান।’