চলনবিলসহ পাবনার চাটমোহরে বেশ কিছু দিন ধরে অবাধে বিচরণ করছে সারসজাতীয় পাখি শামুকখোল। পাখিগুলো চলনবিলসহ চাটমোহর উপজেলার খালবিল জলাশয়ের পাশে নির্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এ এলাকায় শামুকখোল পাখি চোখে পড়ত না। পর্যাপ্ত খাবার, বসবাস ও প্রজননের সুবিধা পাওয়ায় ক্রমেই এ অঞ্চলে বাড়ছে শামুকখোলের সংখ্যা। চলনবিল জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থানগুলোয় প্রায়ই দেখা মিলছে শত শত শামুকখোল পাখির। ঝাঁক বেঁধে এ পাখি যখন উড়ে এক স্থান থেকে অন্যত্র চলে যেতে থাকে তখন মনোমুগ্ধকর আবহ সৃষ্টি হয়। বিলের পাশের গ্রামগুলোর গাছের উঁচু ডালে আবাস গড়ে তুলে রাত যাপন করছে এ পাখি।
শ্বেতকায় বৃহদাকার জলচর পাখি শামুকখোল। কেউ কেউ অদ্ভুত ঠোঁটবিশিষ্ট এ পাখিকে শামুক ভাঙা পাখি আবার কেউ কেউ শামখৈলও বলে থাকেন। এটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্থায়ী পাখি। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশেই শামুকখোল পাখি দেখা যায়। সাদা রঙের শামুকখোল পাখির পিঠ ও ডানার অংশে কালো রঙ দেখা যায়। প্রয়োজনীয় খাবার এবং নিরাপত্তা পেলে এক এলাকাতে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। খাবারের সন্ধানে সকালে বাসা থেকে বেরে হয়ে জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থানে চলে যায়। শামুক, ঝিনুক, ব্যাঙ ও কাঁকড়াসহ ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী এ পাখির প্রধান খাদ্য।
চাটমোহর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু জানান, পাখি প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। চলনবিল এলাকায় শামুকখোল পাখির অবাধ বিচরণ বিলের সৈন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে। আগে এ এলাকায় শামুকখোল পাখি দেখা যেত না, এখন চাটমোহরের বেয়াইলমারী, করকোলা, গৌড়নগর, বোঁথরসহ বিভিন্ন বিলে, মাঠে শত শত শামুকখোল পাখির দেখা মিলছে। এটি অবশ্যই আশা জাগানিয়া একটি বিষয়। তবে চায়না দুয়ারী, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন জালের মাধ্যমে অবাধে পোনা মাছ নিধন হওয়ায় ক্রমাগত চলনবিলের মাছ কমছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের ছত্রছায়ায় এলাকার কিছু গরিব মানুষ বছরের পর বছর বিলের শামুক-ঝিনুক তুলে বিক্রি করায় কমে যাচ্ছে শামুক-ঝিনুকও। মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী রক্ষা করা গেলে ক্রমেই এ পাখির বিস্তৃতি বাড়বে। এ জন্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
পাখিপ্রেমী আশরাফুল আলম হেলাল জানান, এ এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। মানুষের পাখি হত্যার প্রবণতা কমেছে। এখন মানুষ আর অবাধে শামুকখোল পাখি হত্যা করে না। পাখি হত্যা বন্ধে প্রশাসনও তৎপর রয়েছে। চাটমোহরের উত্তরাংশের বিলগুলোর অল্প পানিতে ও পানিসংলগ্ন নিকটস্থ স্থলভাগে শামুকখোল পাখির আধিক্য দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চল বিলের পাশে হওয়ায় শামুকখোল পাখি সহজেই শামুক-ঝিনুকসহ অন্যান্য খাবার পাচ্ছে। সম্ভবত এসব কারণে ক্রমেই এ এলাকায় শামুকখোল পাখির সংখ্যা বাড়ছে।
ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: হাসিনুর রহমান উজ্জ্বল জানান, বছর তিনেক আগেও এ এলাকায় শামুকখোল পাখি ছিল না। গত দুই-তিন বছর ধরে এ এলাকায় শামুকখোল পাখির আনাগোনা বেড়েছে। এখন জলাশয়গুলোর পাশে শত শত শামুকখোল চোখে পড়ে। জলাশয়সংলগ্ন গ্রামের উঁচু গাছে বাসা তৈরি করে বসবাস করছে। সকালে ঝাঁক ধরে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফেরে।
বিলচলন ইউনিয়ন চরসেন গ্রামের বাসিন্দা মো: জামাত আলী জানান, এ বছর বিলচলন বিলে প্রচুর শামুকখোল পাখি দেখা গেছে। মানুষ সাধারণত এ পাখিকে বিরক্ত করে না। তবে কৌতূহলবশত কেউ কেউ ছবি তুলতে গেলে এরা বিরক্ত হয়ে দূরে সরে যায়।
পাবনার ‘ন্যাচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ জানান, শামুকখোল আমাদের দেশীয় পাখি। এ পাখির প্রধান খাবার শামুক। জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থানে বিচরণ করে। এরা বিরক্ত হলে বা খাবার না পেলে দেশের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলে যায়। যে এলাকাকে বসবাসের উপযোগী মনে করে সে এলাকায় বাসা তৈরি করে। বাচ্চা ফোটায়। চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহরে বেশ কিছু বিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং বিলে পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে এ এলাকায় অবাধে বিচরণ করছে শামুকখোল পাখি।