শেখ হাসিনার নামে করা মামলায় হয়রানিমূলকভাবে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানকে আসামি করার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে দেশের ব্যবসায়ী সমাজের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হলে পণ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারো ক্ষোভের কারণে যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আওয়ামী লীগ সরকার বিগত সময়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য দিতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করেছে।
ফোন করে বলা হয়েছে, বক্তব্য না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে না। হয়রানি না করে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে এখন জরুরি ভিত্তিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা উন্নত করা দরকার।
ব্যবসায়ীদের হয়রানি করলে পণ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা চ্যালেঞ্জ হবে : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ব্যাবসায়িক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ব্যবসায়ীরা যদি হয়রানির শিকার হন, তাহলে পণ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থনীতি চালু রাখতে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য ফ্যাক্টরগুলোকেও নিশ্চিত করা জরুরি।
কারো ক্ষোভের কারণে যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন :
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)-এর মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন কোনো অবস্থাতেই অতীতের মতো হয়রানির শিকার না হন, এটা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, শুধু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নন, সারা বিশ্বেই ব্যবসায়ীরা দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন।
কর্মসংস্থান তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। তাই দেশে যত শিল্প-কারখানা আছে, সেগুলোতে সুস্থ ধারা বজায় রাখতে হবে। এগুলোকে সব সময় ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। বাজুসের সাবেক সহসভাপতি বলেন, একজনের কথায় আরেকজনকে যেন হয়রানি না করা হয়। কারণ অনেক সুবিধাবাদী মানুষ আছে, তাদের ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের ওপর।
তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের আড়ালে দুরভিসন্ধি আছে। দুরভিসন্ধি যাতে তারা চরিতার্থ করতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।
বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা মনে করি এই দুষ্কৃতকারীরা অতীতেও ছিল, এখনো আছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জনকে হয়রানি করে। তারা কোনোভাবেই যেন হয়রানি করার সুযোগ না পায়। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
যেকোনো ধরনের ব্যবসায়ী হোক, তাদের প্রতি অন্যায়ের সুযোগ যাতে কেউ নিতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি যারা আছে, তারা যদি অপরাধ করে থাকে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হতে পারে। কিন্তু তাদের হয়রানি করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হলে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানি-রপ্তানি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
চলমান ক্রান্তিলগ্নে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা যাবে না :
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারে মানির সংকট, তারল্য সংকট সমাধানে সরকার নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতিও খারাপ হচ্ছে।
এমতাবস্থায় এমন ক্রান্তিলগ্নে দেশের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অযথা হয়রানিমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার যদি উৎসাহমূলক কাজের দিকে নজর দেয় সেটাই ভালো হবে। পাশাপাশি এ মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে ব্যবসায়ীদের সরকারের স্বার্থে ব্যবহার করা। আগে তো তাদের বক্তব্য-বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছেন বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের কথাই বলব-তাদের বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক রকম বাধ্য করেই।
ফোন করে বলা হয়েছে- বক্তব্য না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে না। আসলে তারা যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। এগুলো তো বুঝতে হবে। এসব বক্তব্যকে আমলে নিয়ে এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো ব্যাবসায়িক পরিবেশ খারাপই হবে। এই মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ হলে তো অর্থনীতি টিকবে না। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।
তিনটি মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ মোট ৫৩৭ জনকে আসামি করা হয়।