টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের ১১ জেলা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ দ্রুত নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা।
এ সময় কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন ধানের উৎপাদন নিশ্চিত করা। তা সম্ভব না হলে শাকসবজিসহ উপযোগী রবিশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো কৃষি উৎপাদন যথাসম্ভব বৃদ্ধি করা। সেজন্য আবাদযোগ্য সব জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। উপদেষ্টা এ সময় বীজ ও সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের জোগান নিশ্চিতকরণ, বীজতলা তৈরি এবং সার্বিক প্রস্তুতি ও করণীয় নির্ধারণ করতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনকালে কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করে যেতে হবে। তিনি এ সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সাময়িকভাবে রাস্তা কেটে বা সুবিধাজনক উপায়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় প্রস্তুতি বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়–
১. বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার অব্যবহিত পরে রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন এবং দণ্ডায়মান আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান চাষকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ধান পুনর্বাসন কর্মসূচি দেওয়ার পর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পুনর্বাসনের জন্য আগাম শীতকালীন সবজি কর্মসূচিও দেওয়া হবে।
২. বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে রোপা আমন ধানের বীজতলা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রমের অব্যাহত রাখতে হবে।
৪. কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার কাছে রোপা আমন ধানের বীজের স্টক সংক্রান্ত তথ্যাবলি সংগ্রহ করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কৃষি পুনর্বাসন বা সহায়তা কার্যক্রমের তথ্যাবলি সংগ্রহ করতে হবে।
৫. বিএডিসি, বিনাসহ অন্যান্য সব সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমন বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা প্রস্তুত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর ও সংস্থার কাছে অবিলম্বে সরবরাহ করবে।
৬. যথাসম্ভব বন্যাকবলিত এলাকার নিকটতম এলাকায় বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে।
৭. মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বন্যাত্তোর কৃষি পুনর্বাসনের কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে শুরু করার জন্য এখন থেকে সক্রিয় রাখতে হবে।
৮. বন্যাকবলিত এলাকায় ব্লক এবং উপজেলা ভিত্তিক পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৯. বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতির তথ্যাদি এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সচেতন করার জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিসকে সামগ্রিক কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের বিষয়ে তথ্য চিত্র প্রস্তুত করতে হবে।
১০. সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
সভায় কৃষি সচিব দেশের বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। উপদেষ্টা এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন ও সবাইকে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী এ দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।