• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটক করতে হবে অন্যথায় চাকরি থাকবে না: নুর

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)-এর আলোচনা সভা - ছবি সংগৃহীত

গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)-এর সভাপতি নুরুল হক নুর বলছেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে অথচ তার দোসররা এখনো সক্রিয়। তারা গোপালগঞ্জে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের ভেতর গোপালগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আটক করতে হবে, তা না হলে সেখানকার প্রশাসনের কারো চাকরি থাকবে না।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা দলটির কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। দেশে বেকারত্ব মহামারি নিরসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাত দফা প্রস্তাবনা শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতার ওপর দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই সরকার সফল হলে দেশের মানুষের জন্য ভালো হবে, আর যদি ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের মানুষকে ভুগতে হবে। তাই সরকারকে সফল করার জন্য সবার উচিত সহযোগিতা করা। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছি এবং ভবিষ্যতেও করব।

তিন বলেন, ‘গোপালগঞ্জের সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হয়ে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করেছিল, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। তাদের শায়েস্তা করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় রকমের অঘটন ঘটাতে পারে। পত্রিকায় এসেছে নতুন ডিসির ৫৬ জনই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, তাদের প্রশাসনে রেখে দেশ সংস্কার সম্ভব না। ছাত্র-জনতা দেশকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে, এখন যুবকদের দায়িত্ব হবে তাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। যুব সংগঠনগুলোর উচিত এখন ঐকবদ্ধভাবে দেশ গঠনে কাজ করা। আগামীতে সংসদে কমপক্ষে ১৫০ জন তরুণ এমপি থাকতে হবে। বর্তমানে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে ২৫ বছর বয়স হতে হয়, এটা কমিয়ে ২১ বছর করতে হবে। তরুণদের সুযোগ দিতে হবে।

আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভবপর নয়। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী সুবিধাভোগী সরিয়ে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটা শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি। এক ব্যক্তির এক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ থাকতে হবে। কিন্তু একজনকে কয়েকটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে সর্বত্র হ-য-ব-র-ল অবস্থা। উপদেষ্টা পরিষদে কমপক্ষে ৫০ জনকে দরকার। যোগ্য ব্যক্তি ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার কখনোই সম্ভবপর নয়। ইতোমধ্যে সর্বত্র বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্র স্থবির হয়ে আছে। রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলকে দূরে রেখে কি রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারবেন?

বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন বলেন, ‘এই সাত দফা প্রস্তাবনা তরুণদের মুক্তির লক্ষ্যে অবিসংবাদিত প্রস্তাবনা। সরকার অনতিবিলম্বে এই প্রস্তাবনা আমলে নেবে, অন্যথায় সারাদেশে তরুণ সমাজের মাঝে জনমত তৈরি করা হবে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মানববন্ধন ও ২২ সেপ্টেম্বর (রোববার) জেলা প্রশাসক বরাবর সারাদেশে স্মারকলিপি প্রদান করবে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

যুব সমাজের মুক্তির সাত দফা প্রস্তাবনা :

১। সকল ধরনের বৈষম্যমুক্ত চাকরি ও কর্মসংস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিবছর নিয়মিত বেকারত্বের জরিপ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করতে হবে।

২। শিক্ষার সকল স্তরে চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আইসিটি সেক্টরে তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৩। সকল প্রকার চাকরিতে আবেদন ফি, অবৈধ সুপারিশ, যেকোনো জামানত ও বয়সসীমা মুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতি মতো অসদুপায়ে নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া বন্ধ এবং সরকারি ও বেসরকারি চাকরির বৈষম্য অবসান ঘটাতে হবে।

৪। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি এবং স্থানীয় উৎপাদন ব্যাবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে দেশের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

৫। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদ জামানতে সুদবিহীন ঋণ প্রদান, শিক্ষিত ও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ঝড়ে পড়াদের এই আওতায় আত্মকর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশের মোট ঋণ প্রদানের ৫০ শতাংশ ঋণ প্রদান করতে হবে। কর্ম ও ঋণ আওতার বাইরে সকল তরুণদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে।

৬। দেশের সকল প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে শতভাগ চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে হবে। চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতার বাইরে থাকাদের উপযুক্ত পরিমাণ ভাতা প্রদান করতে হবে।

৭। বিদেশে জনশক্তি রফতানি ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিতদের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বা সুদমুক্ত ঋণসুবিধার আওতায় বিদেশে প্রেরণ করতে হবে। বিদেশে তরুণদের জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে অবাধ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের দেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাস গমনে তৃতীয় পক্ষের দৌড়াত্ব অবসান, প্রবাসে সকল চিকিৎসা, দেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসী বান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। প্রবাসীদের প্রবাসে থাকা অবস্থায় সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশ প্রেরণের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক (ভিআইপি) মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ এলডিপি যুবদল আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদ, এবি যুব পার্টির সদস্য সচিব হাদীউজ্জামান খোকন, যুব জমিয়ত বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন আল আদনান, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, ইসলামী যুব আন্দোলনের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, বিপ্লবী যুব সংহতির সভাপতির বাবর চৌধুরী।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ