• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন

পার্বত্য অঞ্চলের স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার জনজীবন। তবে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের তৃতীয় দিনেও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। কিন্তু কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রাঙ্গামাটিতে সম্প্রীতি সমাবেশ হওয়ার পর শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে শেষ দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অবশ্য ইতোমধ্যে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে জনজীবন। গত দুই দিনের মতোই দূরপাল্লার সব যান চলাচল বন্ধ থাকলেও শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত টমটম, মোটরবাইকসহ ছোট যানবাহন।

গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত অবরোধকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন ছোটখাটো দু-একটি ঘটনা ছাড়া জেলার কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রামগামী সড়কে যাতায়াতকারীরা সিএনজি অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলে করে জেলার সীমানা পর্যন্ত যাতায়াত করছেন। গত রোববার অবরোধ চলাকালে দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকায় সীমান্ত সড়কের পাথর বহনকারী তিনটি ট্রাক খাগড়াছড়ি ফেরার পথে ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। এ দিকে মানিকছড়িতে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশের গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে যাতায়াতে বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী স্থানীয়দের সহায়তায় তা সরিয়ে দেয়। খাগড়াছড়ি সদরে গতকাল হাটবার হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ দিনও সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির টহল ছিল।

এ দিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। বন্ধ রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে বলে জানান খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রুবায়েত।
অন্য দিকে অবরোধের কারণে সাজেকে আটকে পড়া পর্যটকদের এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সেখানে এক হাজারের বেশি পর্যটক আটকে আছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের গাড়ি ছাড়ছে না বলে জানান বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার।

রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। রাঙ্গামাটিতে শনিবার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার ও সম্প্রীতি সমাবেশ হওয়ার পর শহরের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রোববার সন্ধ্যা থেকে রাঙ্গামাটিতে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শহরের একমাত্র লোকাল যানবাহন সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করেছে।

শুক্রবার সংঘটিত ঘটনায় বনরূপা হ্যাপির মোড় এলাকা থেকে শুরু করে বনরূপা বাজারে বেশ কয়েকটি দোকান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ি ছাত্র জনতার ডাকা ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি গতকাল শেষ হয়। অবরোধের শেষ দিনে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন ও নৌ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। অবরোধ ও পরিবহন বন্ধ থাকায় গত তিন দিন ধরে কৃষি ও কাঁচাপণ্য নষ্ট হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা ।

তদন্ত দাবি পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের : রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ বিহারে সংঘটিত সহিংস ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে রাঙ্গামাটি শহরের কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানায় সংগঠনটি। পার্বত্য ভিক্ষু সঙ্ঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথেরসহ পার্বত্য ভিক্ষু পুণ্যজ্যোতি মহাথের, শীলানন্দ মহাথের, নাইন্দাচারা মহাথের, শীলজ্যোতি মহাথের, মৈত্রী বিহারের সভাপতি পূর্ণেন্দু বিকাশ চাকমা অন্যান্য বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সহিংসতায় ক্ষতি ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা : রাঙ্গামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার ঘটনায় ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘটনার তিন দিন পর গতকাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়। জেলা প্রশাসনের দেয়া ক্ষয়ক্ষতির তথ্য বিবরণ অনুযায়ী, সহিংসতায় ৪৬টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মোটরসাইকেল ও আঞ্চলিক পরিষদের ৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয় মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও বাস। যানবাহনের পাশাপাশি ৮৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, আটটি ব্যাংক, ১৮টি বসতঘর, ৮৫টি অস্থায়ী দোকান, দু’টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দু’টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে। সবমিলিয়ে আনুমানিক ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ