টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা অংশের বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে সোয়া তিন হাজার হেক্টর জমির আট হাজার ২৫০টি মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, কয়েক হাজার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। প্রায় এক শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিল ডাকাতিয়ার প্রান্তিক মাছচাষিরা।
ডুমুরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য অফিসার মো: আবুবকর সিদ্দিক বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ডুমুরিয়া উপজেলায় বিল ডাকাতিয়ার তিন হাজার ৩৬ হেক্টর জমির সাড়ে সাত হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ঘেরে চাষ করা চিংড়ি ও সাদা মাছ। বিল ডাকাতিয়ার ডুমুরিয়া অংশে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা।
একই উপজেলার কৃষি অফিসার মো: ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া এলাকার রংপুর, গুটুদিয়া, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া ইউনিয়নে ধান ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া অংশে কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৫ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, ক্ষেত থেকে পানি সরিয়ে দিতে প্রান্তিক কৃষকরা দাবি জানালেও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে কৃষি অফিসে কোনো সেচ যন্ত্র না থাকায় পানি সরানো যাচ্ছে না। সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলেও ক্ষেতের পানি সরে যাওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ফুলতলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য সম্প্রসারণ অফিসার মো: সেলিম সুলতান বলেন, টানা কয়দিনের ভারী বর্ষণে ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ৭১৫ হেক্টর জমির ৭৫০টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরে চাষ করা চিংড়ি ও সাদা মাছ ভেসে গিয়েছে। ফুলতলার ডুমুরিয়া অংশে সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি।
তিনি আরো বলেন, টানা বৃষ্টি শুরুর আগে মাছ চাষিদের ঘেরগুলো নেট জাল দিয়ে ঘিরে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে যাতে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা যায়।
একই উপজেলার কৃষি অফিসার রাজিয়া সুলতানা বলেন, ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ও বিভিন্ন ধরনের সবজি। ১৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিল ডাকাতিয়া তেলিগাতী মৌজার মাছ চাষি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিল ডাকাতিয়ায় তার ১৩০ একরের ছয়টি ঘেরের মধ্যে চারটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় আট কোটি টাকার মাছ। বাকি দুই ঘের নেট জাল দিয়ে কোনোমতে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু আমার নয়, এ বছর বিল ডাকাতিয়ার সব মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। শত কোটি টাকার বেশি মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এলাকার মাছচাষিরা কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে? সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা তো দূরে থাক, আমাদের খোঁজখবরও কেউ নেয় না।’
সূত্র : ইউএনবি