নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর জামায়াত-শিবিরের ৪ নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুজ্জামানসহ ১১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া মামলার আবেদনে কোম্পানীগঞ্জ থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুধীর রঞ্জন বড়ুয়া, আবুল কালাম আজাদ, শিশির কুমার বিশ্বাস, উক্যসিং মারমার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেনের আদালতে মামলার আবেদন করেন। মামলার আবেদনে অজ্ঞাত ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. শাহ আলম বলেন, নোয়াখালীর ২নং আমলি আদালতের বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে এ ঘটনায় পূর্বের কোনো মামলা আছে কি-না তা কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করতে বলেছেন। একইসঙ্গে মামলা না হয়ে থাকলে নিয়মিত মামলা হিসেবে (এফআইআর) রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার আবেদনের বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জামায়াত ইসলামীর কর্মী। ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর জামায়াতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বসুরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ঘোষণা করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়ত ইসলামী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে। কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করার জন্য ২৫০০-৩০০০ হাজার লোক সমবেত হয়। ওই সময় মামলার বাদী ও তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম মিছিলে অংশ নেন। তখন উপজেলা জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল স্থানীয় কেজি স্কুলের পূর্ব দিকে অগ্রসর হলে আসামিরা অর্তকিত অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা ছিল। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকে হেলমেট পরে অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ছিল। কাদের মির্জা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজনুর রহমান বাদল ও সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকনের নির্দেশে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজম পাশা চৌধুরী রুমেল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্নাসহ ৫০ জন মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এরপর লাঠিসোঁটা দিয়ে মিছিলের লোকজনের ওপর আঘাত করতে থাকে। কাদের মির্জার গুলিতে মামলার বাদীর ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয় এবং মিকনের ছোঁড়া গুলি পেট ছিদ্র হয়ে বের হয়ে যায়।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এসআই শিশির কুমার বিশ্বাস জামায়াত কর্মী মশিউর রহমান সজিবের উপর গুলি করে। এসআই ঊক্যসিং মারমা সজিবের বুকের নিচে গুলি করে।
নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ইসহাক খন্দকার বলেন, ২০১৩ সালে কোম্পানীগঞ্জে গুলিতে জামায়াতের মোট সাত জন নেতাকর্মী মারা যায়। ওই সময় তিন জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ওই ঘটনায় উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চার জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত হয়নি এবং মামলা হয়নি। বর্তমানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় নিহতের স্বজনেরা।