• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বন্যা-ভূমিধস তানজানিয়ায় নিহত অন্তত ১৫৫, আহত দুই শতাধিক ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩ দায়িত্ব পালন কালে হিটস্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী-এমপিদের সজনদের কাছে জিম্মি স্থানীয় জনগণ : রিজভী ৪ মে থেকে খুলতে পারে স্কুল-কলেজে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে পড়েছিল রিকশাচালকের লাশ স্ত্রীর বেগোনার দুর্নীতির কারণে দায়িত্বপালন স্থগিতের ঘোষণা স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা

খালেদা জিয়া বিহীন নির্বাচন প্রতিরোধ করবে বিএনপি

আপডেটঃ : শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘প্রতিরোধের ঘোষণা’ দিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। প্রতিহত করা হবে।
শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে এক বিরাট সমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের এক নম্বর শর্ত হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনে কিছুদিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করতে হবে।নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে থাকে বিএনপির ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় নেতাকর্মীরা মিছিল থেকে মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইসহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। অপরদিকে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র বিএনপি অফিস, পল্টন মোড়, ফকিরাপুল মোড়সহ এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবং সোয়া পাঁচটার দিকে শেষ হয়। বিএনপির সমাবেশকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দু’টি সড়কে গাড়ি চলাচলও বন্ধ ছিল। এতে আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং এ এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসেন। কিছু শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পেলেও সময় স্বল্পতার কারণে মঞ্চ তৈরির সুযোগ পায়নি বিএনপি। ফলে খোলা ট্রাকের ওপর মঞ্চ তৈরি করে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সমাবেশের বিস্তৃতি ঘটে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী,সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নিতাই রায় চৌধুরী, কাজী আবুল বাশার, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, আব্দুল সালাম আজাদ,শফিউল বারী বাবু,আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল,রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান মিন্টু,হেলাল খান প্রমুখসহ দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে চান না, কারণ আপনারা জানেন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে আপনাদের পরাজয় সুনিশ্চিত।সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ ২০টা আসনও পাবে না।
সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পান বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধি, তাকে জেলে রেখে এ দেশে কোন নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। বিশেষ করে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বামপন্থী আটটি দলের নতুন জোটকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ‘জাতীয় ঐক্যে’ তাদেরকেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্যান্য সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সমস্ত দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেভাবে বুকে চেপে আছে, তার থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।এই সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে রক্ষার জন্য, আমাদের ওপর যে দুঃশাসনের পাথরের মতো বসে আছে তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বললেন কোটাই থাকবে না, এটা বাতিল। পরে দেখা গেল উল্টো আন্দোলনকারীদের মিথ্যা মামলায়, গুম করে, মাথা মুড়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ অবস্থায় গেছে, বিদেশি দূতাবাসও এগুলো বন্ধ করতে বলছে। দেশের প্রতিটি মানুষ ভয়ে আছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ জানে না, কখন যে তারা গুম হয়ে যায়। কোটা আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে।
কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আজকে ছাত্রলীগের ভূমিকা খান সেনাদের ভূমিকার চেয়েও ভয়াবহ। আজ যারা কোটার জন্য আন্দোলন করছে তাদের মায়েরা বলছে আমার ছেলের চাকরি চাইনা, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। বাংলাদেশ আজ কেউ নিরাপদ নয়। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের সমস্ত ব্যাংক লুট করা হয়েছে, এমনকি বাংলাদেশে ব্যাংকে আসল সোনাকে নকল সোনায় রূপান্তরিত করছে।দেশে কোন বিদেশি বিনিয়োগ নাই, চাকরি নাই। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চরম খারাপ অবস্থা এখন। সরকারের সে দিকে নজর নাই, নজর হলো যারাই বিরোধিতা করবে তারকেই জেলে ভরতে হবে। জামিন পাওয়ার কথা, জামিন নাই, উল্টো অন্যান্য মিথ্যা মামলায় আটক করা হচ্ছে নেতাকর্মীদেরকে।
তিনি বলেন, আমরা এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না, এ দেশের মানুষের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সেই আন্দোলন করতে আপনারা দেবে না, দিলে সত্য বেরিয়ে আসবে। তখন আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।ফখরুল বলেন,দেশে এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে, ত্রাসের ভয়ের রাজত্ব তৈরি হয়েছে। দেশে এখন প্রত্যেক মানুষ অনিরাপদ।৭৮ হাজার মামলায় বিএনপির ১৮ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করা, প্রায় ৫০০ নেতাকে গুম করা হয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চায় সরকার। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না,প্রতিহত করা হবে। তার মুক্তি না হলে দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। বিদেশিরা বলেছেন, দেশের মানুষ বলছেন- বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ঘোষণা দিয়ে ড. মোশাররফ বলেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে এবং মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে।
ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার একটি সুযোগ এসেছে। আর তা হলো এই সরকারের পতন ঘটানো।আগামীতে জনসভা করার জন্য আমরা কোন অনুমতির অপেক্ষায় বসে থাকব না। কর্মসূচি দেবো এবং তা বাস্তবায়িত হবে।মওদুদ আহমদ বলেন, এ দুঃশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। যদি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্ভব না হয় তাহলে রাজনৈতিকভাবেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনে যাব। কেউ যদি মনে করেন ফাঁকা মাঠে গোল দিবো তা দিতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন। সে আন্দোলনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সামনে থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া মুক্ত হবে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার যে কৌশল নিয়েছে তা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে তারা একটি পাতানো নির্বাচন করতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি, খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে সরকারের পাতানো নির্বাচন করার পরিকল্পনা কোনদিনই সফল হবে না
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,যতক্ষণ পর্যন্ত না খালেদা জিয়া মুক্তি পায়, বিএনপি ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না।
অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকার আবারও ভোট ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি ও রক্তাক্ত বাংলাদেশ করতে চায় কিন্তু এবার সেই সুযোগ তাদের দেয়া হবে না।
মঞ্চে বসা নিয়ে মাথা ফাটলো ছাত্রদল নেতার
সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই ট্রাকের ওপর স্থাপিত মঞ্চে বসা নিয়ে নেতাকর্মীদের ভেতর হুড়াহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে আব্বাস আলী নামে এক ছাত্রদল নেতার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে দেখা গেছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ