বরফ শীতল দেশ থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখরিত ফেনী শহরতলীর শর্শদি ইউনিয়নের মধ্য জাহানপুরের জাম্বারা দিঘি । পুরো দিঘির জলাশয় সেজেছে এক অপরূপ সাজে। পাখি আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। গ্রামবাসীও পরম যত্নে আগলে রাখছেন অতিথিদের। সজাগ দৃষ্টি রাখছে বন বিভাগও।
দিঘির এক পাশে গ্রামের বাসিন্দারা গোসলসহ দৈনন্দিন সব কাজ করলেও অন্য প্রান্তে পাখিরা নিজেদের রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন, তবে এতে দূর দেশের অতিথিদের কোনো হেলদোল নেই।
স্থানীয়রাও পাখিদের বিষয়ে যত্নশীল, কোনোভাবেই পাখিদের বিরক্ত করা যাবে না। গ্রামের সবাই মিলে এই দিঘিকে পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম করে তুলেছেন।
দিনভর জলকেলি, খুনসুটি সে সঙ্গে কিচির-মিচির শব্দ। কখনো ঝাঁক বেঁধে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়াউড়ি।
গ্রামবাসী বিরক্ত করাতো দূরের কথা অতিথিদের রেখেছেন পরম যত্নে। রক্ষা করছেন শিকার থেকে।
গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আসগর আলী বলেন, অনেক বছর তিনি এই দিঘিতে পরিযায়ী পাখি দেখছেন। গ্রামের কেউ এ পাখিদের বিরক্ত করেন না।
রফিকুল ইসলাম নামের আরেক যুবক বলেন, গ্রামের কেউ পাখিগুলোকে শিকার করে না বরং যত্ন করে রাখে। পাখিগুলো রক্ষার বিষয়ে কড়া নজরদারি করেন গ্রামের সব যুবক।
পানকৌড়ি, বালি হাঁস, রাঙ্গা ময়ূরী, ছোট স্বরালীসহ কয়েক রকমের পরিযায়ী পাখির এ বিচরণ ক্ষেত্রটি ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকেই শুরু হয়।
শীত প্রধান এলাকা থেকে আসা এসব পরিযায়ী পাখির অনুকূল পরিবেশ আর প্রয়োজনীয় খাবার নিশ্চিত হওয়ায় আস্তানা গড়েন দিঘিতে।
গত বছরের চেয়ে এবার বিপুল পাখির আগমনে তৈরি হয়েছে অন্য এক পরিবেশ।
পাখিদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াস বন্য-প্রাণী রেসকিউ টিম, সার্বক্ষণিক নজরদারির কথা জানিয়েছে বন বিভাগও।
সামাজিক বন বিভাগ ফেনীর রেঞ্জ অফিসার বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, জাম্বারার দিঘিটিসহ জেলার যেসব দিঘি ও জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি আসে সব জায়গায় নজরদারি রাখা হয়। কেউ শিকার করতে চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বন্যপ্রাণী রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সাইমুম ফারাবী বলেন, পাখিরা কোনোভাবে আহত হলে কিংবা বিপদগ্রস্ত হলে তাদের টিম সশরীরে গিয়ে কাজ করে।
পাখি প্রেমীরা বলছেন, এ দিঘিতে প্রায় ১০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে এবার। ডিসেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিঘিটিতে অবস্থান করে এই পাখিগুলো।