বিশ্বের তাবলীগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতের নিজামুদ্দিনের (তাবলীগের প্রধান কেন্দ্র) মুরুব্বী মাওলানা সাদকে ঘিরে এ ষড়যন্ত্র দানা বাধছে। আর এ নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন বাংলাদেশের তাবলীগের কয়েকজন। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মালয়েশিয়া নও মুসলিম আব্দুল্লাহ চং বিশ্ব ইজতেমা সরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে এ চিঠি পাঠান।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, তাবলীগের মুরুব্বী মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমায় আসতে না দিলে বাংলাদেশ থেকে ইজতেমা মালয়েশিয়াতে নিয়ে যাওয়া হবে। যদিও মালয়েশিয়া তাবলীগের শুরা ফয়সালরা (নীতি নির্ধারকরা) এ চিঠির বিরোধিতা করে পাল্টা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে ইজতেমার প্রতিই সমর্থন জানিয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত মাওলানা সাদের বক্তব্য ‘তাবলীগ করা ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না’ এমন বক্তব্যের জের ধরে। ভারতের সবচেয়ে বড় ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করা হয়। এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য বলা হলেও মাওলানা সাদ উল্টো যুক্তি দেন। তারপর থেকেই বিশ্বব্যাপী মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের আলেমরাও এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ যেনো না আসতে পারেন সেজন্য আলেমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেন। তাবলীগের বাংলাদেশের ১১ জন শুরা ফয়সালের মধ্যে ৬জনই আলেমদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তারপরেও একটি অংশ তাবলীগের মুরুব্বী ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এদিকে গত ৭ জানুয়ারি তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী ও কওমি আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি মাওলানা সাদের ঢাকা সফরের প্রতি নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেন। যাত্রাবড়িার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় এ বিষয়ে আলেমদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ তাবলীগের শুরা সদস্য, উপদেষ্টারাও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উলামায়ে কেরাম, কাকরাইলের শুরার উপদেষ্টা, কাকরাইলের শুরা ও তাবলীগ বিষয়ে ভারতে সফর করে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্য উপস্থিতি ছিলেন। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলেমরা দেখা করলে তিনি এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত দেন। এ বৈঠকে ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদ না আসার পক্ষে মত দেন। এরা হলেন, বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মাদ যোবায়ের, মাওলানা মুহাম্মাদ হোসাইন ও মাওলানা ফারুক, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা আনাস মাদানী, তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা উমর ফারুক ও মাওলানা রবীউল হক, শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা মিযানুর রহমান সাঈদ, হাটহাজারীর মুফতী কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা মুফতী মোহাম্মাদ আলী (আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের প্রতিনিধি), ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক।
তাবলীগের শুরা ফয়সাল মাওলানা ফারুক বলেন, “যেহেতু মাওলানা সাদকে নিয়ে কিছু কথা উঠেছে, তাই আমিও এবারের ইজতেমায় তার না আসার পক্ষে রায় দিয়েছিলাম। সম্মিলতি আলেমগণ তার না আসার বিষয়ে মতামত দিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।”
তারপরেই গতকাল ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের সর্বস্তরের আলেম ও তাবলীগ জামাতের অধিকাংশ মুরুব্বীদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজনের স্বাক্ষর জাল করে ভারতের বিতর্কিত আলেম সাদ’কে বিশ্ব ইজতেমায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন ঢাকার কাকরাইলের মুরুব্বী প্রকৌশলী সৈয়্দ ওয়াসিফুল ইসলাম। চিঠিতে তিনি নিজেকে তাবলীগের ফয়সাল বলেও দাবি করেন। অথচ বাংলাদেশের তাবলীগের প্রধান কার্যালয় কাকরাইলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে চলতি সপ্তাহের ফয়সালের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা ফারুক। ওয়াসিফের এ চিঠি তাবলীগে ফের বিতর্ক সৃষ্টি করছে বলেও তাবলীগ সংশ্লিষ্ট মনে করেন।
এদিকে ওয়াসিফ যে চিঠি দিয়েছেন তাদের কয়েকজন শুরা সদস্যের স্বাক্ষর জালেরও অভিযোগ উঠেছে। তার চিঠিতে উল্লেখিত ১১ জন শুরা সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৪ জনকে শুরা সদস্য হিসেবে পাওয়া যায়। এছাড়া চিঠিতে যুক্ত শূরা সদস্য প্রফেসর ইউনূছ শিকাদারের স্বাক্ষরটি জাল করা হয়েছে বলেও ওয়াসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।