হাসুমনি নামটি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের একটি প্রতীক। আমি যেমন
আমার মেয়ে মামনি ডাকি তেমনি তখন বঙ্গবন্ধুও শেখ হাসিনাকে হাসুমনি
বলে ডাকতো। আমরা বঙ্গবন্ধর আদর্শকে ধারণ করি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা সামনাসামনি দেখিনি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা জেনেছি বই পড়ে, সিনিয়রদের কাছ থেকে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীন, স্বার্বভৌম একটি রাষ্ট্র দিয়ে গেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য সেটা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি।
কিন্তু এই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশটাকে বিকশিত করেছে এবং
বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে তার কন্যা
মোহাম্মদ ওমর ফারুক
বঙ্গবন্ধুর সেই আদরের নয়নমণি ছোট্ট ‘হাসুমনি’ মানবিকতা আর ন্যায়বোধ দিয়ে বাংলাদেশের প্রিয় নেত্রী হয়ে বিশ্ব নেত্রীর মর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর প্রিয় নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘হাসুমনির পাঠশালা’। যেখানে শেখ হাসিনা নিয়ে জানা যাবে, পড়াশোনা করা যাবে।
নতুন প্রজন্ম যাতে করে শেখ হাসিনাকে জানতে পারে চিনতে পারে, তাঁর কর্মকে অনুসরণ করতে পারে, নেত্রীর কর্মদক্ষতা থেকে যেন মানুষ উত্সাহ পায় এমন কিছু থেকেই পাঠশালাটি বলছিলেন উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
জামালপুরের মেয়ে পপি। ছোটবেলা বাবার কাছে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনতেন। বাবা-ই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু নামটির সাথে। পরিবারের সবার ছোট পপি বড় ভাইরা তত্কালীন সময়ে জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের সাথে এবং তাদের কর্মযজ্ঞ দেখেই রাজনীতির অনুপ্রেরণা জন্ম নেয় তার। আর রাজনীতিতে ওইভাবে শুরুটা ক্লাস এইটে পড়ার সময়। তিনি বলেন, ৮৪-তে যখন এরশাদের সময় ছিল তখন জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে আওয়ামী লীগ একটি হরতাল ডাক দেয়, আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি সেই সময়ে আমাদের ব্যাচটি ছিল স্কুলের সেরা ব্যাচ। এবং সেই ব্যাচের বন্ধু-বান্ধবরা আমার কথা শুনতো। সেই সুবাদে জননেত্রীর হরতালে সারা দিতে আমরা ক্লাস না করে বের হয়ে যাই এবং আমাদের দেখাদেখি স্কুলের সবাই হরতাল পালনে নেমে যায়। বলতে গেলে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এটায় আমার প্রথম অংশগ্রহণ। তারপর কলেজে ভর্তি হলাম। সেই সময় নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হলো নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেয়ার জন্য। এবং সেই দিনের এক বক্তব্যেই কলেজে সবার কাছে পরিচিতি পাই। একটা কথা বলে রাখা ভালো, আমর বড় ভাই কিন্তু আমাকে বলে দিয়েছিল, কলেজে অনেকে রাজনীতি করতে বলবে, রাজনীতিটা করলে ছাত্রলীগ যেন করি।’
সেই নবীনবরণেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়ে যান তিনি। তারপর কলেজে নিয়মিত মিছিল, বক্তব্যে অংশ নিতেন। তারপর কলেজ সংসদ নির্বাচনে মিলনায়তন সম্পাদক নির্বাচিত। কলেজ শেষ হওয়ার পর সোজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। এবং সেখানেও পুরো দমে রাজনীতি শুরু। প্রথম বর্ষে এসেই রোকেয়া হলের জয়েন্ট সেক্রেটারি। হলে ওঠার কয়েকদিন পরেই নেত্রীর সাথে দেখা। পপি বলেন, ৩২ এ গিয়ে যখন আপাকে দেখলাম তখন মনে হয় জীবনে সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল। আপার সাথে ড্রয়িং রুমে বসে ছবি তুলেছি, নাস্তা খেয়েছি। আসার সময় আপা অনেকগুলো বই দিলেন। নেত্রীকে দেখে আমি যে মুগ্ধ হয়েছি, সেই মুগ্ধতার ঘোর এখনো কাটেনি। তখন মনে হলো সব বাদ আমি নেত্রীর জন্য জীবনও দিতে পারবো। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হলাম। পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলাম।’
মারুফা আক্তার পপি প্রধানমন্ত্রীর ৭০তম জন্মদিনে হাসুমনির পাঠশালাটির যাত্রা শুরু করেন। এ্যালিফ্যান্ট রোডে তিনটি রুমে আপাতত চলছে পাঠাগারটির কার্যক্রম। পপির নিজ এলাকায়ও আছে এই পাঠারগারের একটি শাখা। যেখানে আলোচনা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সকল কর্মকাণ্ডগুলোকে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর পুরো মাসের বক্তব্যগুলো নিয়ে আয়োজন করা হয় সেমিনার এবং তিন মাস অন্তর অন্তর সেমিনার এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যগুলোকে নিয়ে করা হয় প্রকাশনা। শুধু তাই নয় বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামীলীগ সরকারের নানান উন্নয়সমূলক কর্মকাণ্ডগুলো দেখানো হয় প্রজেক্টরের মাধ্যমে। উদ্যোগটি দেশের প্রতিটি জেলা, থানা, ইউনিয়র পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে উদ্যোক্তা। এখানে কিছু সাহিত্যের বই আছে কিন্তু বেশিরভাগ হচ্ছে মুক্তি যোদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকে নিয়ে।
পপি বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। মানবিক, অসামপ্রদায়িক, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়ক। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাগির তিনি। সারা বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ভরসাস্থল। আগামী প্রজন্মেও তরুণরা যাতে শেখ হাসিনাকে দেখে উত্সাহ পায়, অনুপ্রেরণা পায় সেই জন্যই এই ক্ষুদ্র প্রয়াশ।
রাজনীতি বাইরে এমন উদ্যোগ কেন জানতে চাইলে পপি বলেন, আমি তো রাজনীতি করি এর বাইরে চিন্তা করলাম আর কি কন্ট্রিবিউশন রাখা যায়। সেই চিন্তা থেকে এমন উদ্যোগটি নিয়েছি। এবং আমি মনে করি এই বইটাও একটি সাংগঠনিক কাজের অংশ। আমাদের লঘুর হাসুমনি যে কালো লেখাটা টা সেটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে লেখা। শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ এবং মেধাবী প্রজন্ম যদি গড়তে চাই তাহলে আমাদের একটি শিক্ষিত প্রজন্ম লাগবে। যারা বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানবে, মুক্তিযুদ্ধ জানবে, শেখ হাসিনাকে জানবে। আর এই জানার চাহিদা পূরণ করবে হাসুমনির পাঠশালা।
হাসুমনি নামটা হচ্ছে একটা নতুন প্রজন্মের একটি প্রতীক। আমি যেমন আমার মেয়ে মামনি ডাকি তেমনি তখন বঙ্গবন্ধুও শেখ হাসিনাকে হাসুমনি বলে ডাকতো। আমরা বঙ্গবন্ধর আদর্শকে ধারণ করি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা সামনাসামনি দেখিনি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা জেনেছি বই পড়ে, সিনিয়রদের কাছ থেকে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীন, স্বার্বভৌম একটি রাষ্ট্র দিয়ে গেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য সেটা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি। কিন্তু এই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশটাকে বিকশিত করেছে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে তার কন্যা। দেশের নাগরিকদের উন্নতজীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা। নতুন প্রজন্মকে তার উন্নত চিন্তা ভাবনা, এই যে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার এই যে কর্মদক্ষতা আর অর্জন। এই ব্যাপারগুলো যদি নতুন প্রজন্ম উদাহরণ হিসেবে সামনে রাখে তাহলে তার কোনো কিছুকেই পরোয়া করার কথা নয়।