দেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকালে স্পষ্টই প্রতীয়মান ফতুয়া পোশাকটি শুধু আরামদায়ক নয় ফ্যাশনেবলও বটে। তার গায়ে প্রায় সময়ই বিভিন্ন রঙের গ্রামীণ চেকের ফতুয়া দেখা যায়, যা নজর কাড়ে সবারই। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুদেরও নরম কাপড় দিয়ে বানানো ফতুয়া পরানো হয়।
কেননা এ পোশাকটি শুধু দেখতেই সুন্দর না যথেষ্ট আরামদায়কও বটে। ফতুয়া পোশাকটির নামের সঙ্গেই মনে হয় আরামজুড়ে আছে। শিশু-কিশোর-বৃদ্ধা সবার কাছেই এ পোশাকের বেশ কদর। অনেকেই সুতির গজ কাপড় কিনে ফতুয়া বানিয়ে পরে। অনেকে আবার রেডিমেট কিনে নেয়।
গরমের আরামদায়ক পোশাক হিসেবে ফতুয়া প্রচলিত সুদূর অতীত থেকেই। এক সময় ফতুয়াকে গণ্য করা হতো ঘরোয়া পোশাক হিসেবে। কিন্তু যখন থেকে ফ্যাশনে স্টাইলের পাশাপাশি আরামকেও প্রাধান্য দেওয়া শুরু হলো, তখন থেকেই নানা নিরীক্ষার মাধ্যমে ফ্যাশনের জগতে ফতুয়ার আনাগোনা। অতীতে শুধু পুরুষরাই ফতুয়া পরতেন।
কিন্তু এখন পুরুষরা তো বটেই নারীরাও ফতুয়া পরছেন সমানতালে! ফতুয়া একটি ক্যাজুয়াল পোশাক হলেও এর সুবিধা হলো কাজের জায়গা বা অফিসেও এটা মানিয়ে যায় বেশ। এ পোশাক পরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমাও নেই। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত কিশোরী ও তরুণীরাই ফতুয়া পরে থাকেন। ফতুয়া তৈরির কাপড়েও নেই কোনো বাঁধাধরা ব্যাপার। সাধারণ সুতি কাপড় দিয়ে যেমন ফতুয়া বানানো যায়, তেমনি বানানো যায় জমকালো সিল্কের কাপড় দিয়েও!
রোজকার কাজ যেমন কলেজ, ভার্সিটি বা অফিসে পরার জন্য সুতি কাপড়ে বাটিক বা টাইডাইয়ের ফতুয়ার জুড়ি নেই। ছেলে বা মেয়ে উভয়েই পরতে পারেন এসব কাপড়ের ফতুয়া। ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্টের ফতুয়াও বেশ চমৎকার লাগে। আজকাল ছেলে ও মেয়ে সবার ফতুয়াতেই যোগ হয়েছে লেসের কাজ। হাতের কাজের ফতুয়াও পরতে পারেন অনায়াসে। গরমে লিনেন কাপড়ও বেশ আরামদায়ক। তাই প্রতিদিনের কাজে পরার জন্য বেছে নিতে পারেন লিনেন কাপড়ের ফতুয়াও।
খাদি কাপড় যদিও একটু মোটা তবুও দেশীয় ঐতিহ্যের খাতিরে পরতে পারেন খাদির ফতুয়া। আজকাল পাতলা খাদি কাপড় পাওয়া যায়। গরমে আরাম দেবে এ কাপড়টাও। ফতুয়ার রং হিসেবে বেছে নিন আপনার সঙ্গে মানানসই যেকোনো উজ্জ্বল রং। শুধু কি রোজকার কাজে? ফতুয়া এখন উৎসবের পোশাকও! বিশেষ করে নিপুণ হাতের কাজের জমকালো ফতুয়া উৎসবের পোশাক হিসেবে এই গরমে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
তবে উৎসবের ফতুয়া হওয়া চাই এমন, যাতে ফতুয়ার রং-নকশা-উপকরণে আসে উৎসবের আমেজ। এই গরমে উপকরণ হিসেবে সুতিটাই সেরা। তবে দেশীয় নানা ধরনের সিল্ক, অ্যান্ডি কটন গরম এড়িয়ে উৎসবকে ফুটিয়ে তোলে। দিনের উৎসবে ফতুয়ার জন্য হালকা রং বেছে নিন। রাতের জন্য বেছে নিন গাঢ় ধরনের রং। ম্যাজেন্টা, মেরুন, কমলা, গোলাপি, হলুদ, লেমন ইয়েলো, সাদা, ফিরোজা, আকাশী, নেভি ব্লু, প্যাস্টেল গ্রিন ইত্যাদি রংগুলোই এখন পোশাকে চলছে।
ছেলেরা হাফহাতা বা ফুলহাতা দুটোই পরতে পারেন। কলার বা ব্যান্ড গলাই ভালো দেখাবে। মেয়েরা হাতার ক্ষেত্রে থ্রি-কোয়ার্টার বা বেল হাতা পরতে পারেন, এমন হাতারই ট্রেন্ড চলছে। তবে চাইলে ফুলহাতাও পরতে পারেন। বোতাম দেওয়া হাইনেক বা গোলগলা বেশ ভালো দেখাবে। ছেলেমেয়ে উভয়েরই ফতুয়ার ঝুল আগের চেয়ে বেড়েছে, তাই খেয়াল রাখুন এদিকে।
শুধু হাতের কাজের ফতুয়া নয় পরতে পারেন অন্যান্য ডিজাইনের ফতুয়াও। আজকাল হরেক রকম পাইপিং, বর্ডার, কাপড়ে বানানো ছোট-বড় বোতাম দিয়ে সাজানো হচ্ছে ফতুয়া। ফলে দিনকে দিন বাড়ছে বৈচিত্র্যময় ফতুয়ার সমাহার। কাটিংয়েও এসেছে নানা পরিবর্তন। বিশেষ করে মেয়েদের ফতুয়ার কাটিং নিয়ে হচ্ছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
সঙ্গে কী পরবেন : ছেলে বা মেয়ে যে-ই ফতুয়া পরুন না কেন, ফতুয়ার সঙ্গে জিন্স সবচেয়ে মানানসই। কলেজ-ভার্সিটি বলুন, আর অফিসেই বলুন! বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা ঘরোয়া আয়োজনেও ফতুয়ার সঙ্গে জিন্সই মানাবে। পরতে পারেন গ্যাবার্ডিনও। তবে আনুষ্ঠানিক আয়োজনে ফতুয়ার সঙ্গে কালো, বাদামি বা কফি রঙের প্যান্ট বেশ আকর্ষণীয় দেখায়। মেয়েরা ফতুয়ার সঙ্গে পরতে পারেন স্কার্টও। ক্যাপ্রি বা জেংগিসও পরতে পারেন অনায়াসে। ফতুয়ার সঙ্গে মানানসই একটি স্কার্ফ পোশাকে আনবে পূর্ণতা।