উল্লাপাড়া(সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি॥
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শিক্ষার নামে রমরমা বানিজ্য চলছে। একের পর এক স্কুল গড়ে উঠছে। এর প্রায় সবকটি সরকারী কোন অনুমোদন না নিয়েই প্রতিষ্ঠা ও চলছে। এসব স্কুলে নানা প্রলোভনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বানিজ্য হচ্ছে। ভর্তি ফি ও বেতন খাতে মোটা অংকের টাকা নেয়া হচ্ছে। সরকারের নিয়ম নীতি কোন কিছুই মানা হচ্ছে না।
উল্লাপাড়া উপজেলা সদর ছাড়াও প্রত্যান্ত বাজার এলাকা গুলোতেও এমন স্কুল প্রতিষ্ঠা করে চালানো হচ্ছে। এর বেশির ভাগই কেজি স্কুল পরিচিতিতে চলছে। এছাড়া নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের আড়ালে কোচিং সেন্টার চালানো হচ্ছে। এসব স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনুমোদিত অন্য স্কুলে শিক্ষার্থী পরিচয়ে পরীক্ষা দেয়ানো হচ্ছে। উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে এক ডজনেরও বেশি এমন স্কুল চলছে। এর কয়টি হলো-ক্যারিয়ার ইংলিশ স্কুল, শহীদ মডেল স্কুল, তাহফিজুল কোনআন ক্যাডেট মাদরাসা, শহীদ ক্যাডেট একাডেমি, হীরা প্রিক্যাডেট এন্ড হাইস্কুল, জিনিয়াস ক্যাডেট একাডেমি, করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজ, বাইতুল হিকমা ক্যাডেট মাদরাসা, আইডিয়াল ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল। জানা গেছে, বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কেউ কেউ স্কুল গুলো প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে। এরা নিজেরা খন্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন। এর পাশাপাশি কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই স্কুলগুলোয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে চালানো হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে বানিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় বাসা কিংবা দোকান ভাড়া নিয়ে স্কুল গুলো চলছে। জানা যায়, সরকারের নীতিমালার মধ্যে কেজি স্কুল পরিচালনায় সরকার বরাবরে জমি লিখে দেয়া ও নিজস্ব একাডেমিক ভবনাদি থাকতে হবে। এছাড়া যোগ্যতা মোতাবেক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সেখানে নিয়মনীতির কোন কিছুই না মেনে সবকটি স্কুল মনগড়া ভাবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা হচ্ছে।
উল্লাপাড়া ঝিকিড়া আবাসিক এলাকায় ২০১২ সালে জিনিয়াস ক্যাডেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে চলছে। এর আরেকটি নাম দেয়া হয়েছে জিনিয়াস মডেল স্কুল। এটি ভাড়া জায়গায় চলছে। এ স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ১শ ৯০ জন। আর শিক্ষক সংখ্যা ১৬ জন বলে জানা যায়। এ স্কুলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাশেদ এমপিওভুক্ত অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। স্কুল টিতে ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা এবং প্লে গ্রুপ থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক বেতন ৩শ ৫০ টাকা ও ৫ম শ্রেণির বেতন ৫শ টাকা। এ স্কুলে একই ক্যাম্পাসে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত কোচিং সেন্টার চলে। ঝিকিড়া কবরস্থান এলাকায় ২০১২ সালে বাইতুল হিকমা ক্যাডেট মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্লে গ্রুপ হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমান ১শ ৩০ জন শিক্ষার্থী ও ৯ জন শিক্ষক রয়েছে। এটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রাশেদুল হাসান মামুন জানান, এর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সরকারী কোন অনুমোদন নেই। প্রতি শিক্ষার্থীর ভতি ফি ২ হাজার টাকা, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনির মাসিক বেতন ৪শ ৫০ টাকা এবং তৃতীয় থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন ৫শ ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের খোর্দ্দগজাইল মাদরাসার শিক্ষার্থী দেখিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো হয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমজি ইজদানী জানান, উল্লাপাড়ার এসব স্কুলে সরকারী কোন অনুমোদন নেই। সরকারী নিয়মনীতি অমান্য করেই বছরের পর বছর চলছে। এলাকার বিভিন্ন মহল প্রভাব খাটিয়ে এ স্কুল গুলো প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী অনুমোদনহীন নিম্নমাধ্যমিক পরিচয়ে এসব স্কুল গুলোর বিষয়ে যথাযথ অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।