• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ অপরাহ্ন

প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরো ৮২২ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে আবারো বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকটি ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা দেওয়ার কথা বললেও তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র কিংবা প্রমাণ দেখাতে পারেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে ব্যাংকটি এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে। উচ্চ আদালত এ বিষয়ে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) আপিল বিভাগে গেলে আপিল বিভাগ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে। ফলে ওই টাকার উপর ১৫ শতাংশ হিসেবে ৮২২ কোটি টাকা ভ্যাট দাবি করছে এনবিআরের বৃহত্ করদাতা ইউনিট।
এলটিইউ ভ্যাট অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের এ আদেশ এলটিইউ হাতে পেয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে ৮২২ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধের জন্য চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করে এনবিআর। ইতোমধ্যে ওই অর্থ পরিশোধও করেছে ব্যাংকটি।
সূত্র জানায়, চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় আলোচ্য সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে এনবিআরের ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে হবে। কিংবা উচ্চ আদালতেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর কোনোটিই না করলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে এনবিআর চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত ব্যাংকটির হিসাব জব্দ করতে পারবে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রপ্তানিকারকদের ঋণপত্রসহ কিছু খাতের ব্যাংক সেবা ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত। অর্থাত্ এসব সেবায় কোনো ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। এর বাইরে অন্যান্য খাতের সেবার উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ইত্তেফাককে বলেন, ব্যাংকটির দাখিলকৃত ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবার প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করতে এ নিয়ে তিন দফা ব্যাংকটিকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা কোনো প্রমাণপত্র দেখাননি। বরং তারা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন। উচ্চ আদালত ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর আমরা আপিল বিভাগে সিএমপি (সিভিল মিসেলিনিয়াস পিটিশন) দায়ের করি। এরপর আপিল বিভাগ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার (ভেকেট) করে। আজ (গতকাল বুধবার) ওই আদেশের কপি আমাদের হাতে এসেছে। আগামী রবিবার নাগাদ আমরা ব্যাংকটির কাছে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করবো।
এর আগে গত বছরের ৩ অক্টোবর এলটিইউ-ভ্যাটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি টিম প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে তারা ব্যাংকের ভ্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন হিসাবপত্র পর্যালোচনা করেন। তাতে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাংকিং সেবার বিপরীতে ব্যাংকটির ১ কোটি ৩১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার ভ্যাট প্রদেয় হয়েছে। আর উেস কর্তনকৃত ভ্যাটের পরিমাণ ২১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাত্ সব মিলিয়ে তাদের প্রদেয় ভ্যাট প্রায় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট পরিশোধ করেছে মাত্র ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাত্ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২০ কোটি ১৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। এর পর ওই অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যাংক হিসাব জব্দের অনুরোধ করে এনবিআর, যা বিরল ঘটনা। পরবর্তীতে অবশ্য ওই অর্থ পরিশোধ করে দেয় ব্যাংকটি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ