দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফ আসতে শুরু করেছে। ট্রলারে যোগে দ্বীপের আতঙ্কিত এসব মানুষ টেকনাফ আসছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দ্বীপের অনন্ত ২০০ পরিবারের দেড় হাজারের কাছা-কাছি মানুষ টেকনাফ অবস্থান করে আশ্রয় নেয়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান জানান, কত সংখ্যক মানুষ দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফ চলে এসেছে তার সঠিক পরিসংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে দ্বীপে ব্যবসার জন্য অবস্থান নেয়া বাইরে লোকজন এবং দ্বীপের কিছুসংখ্যক মানুষ টেকনাফে এসেছে। দ্বীপের মানুষরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হলে টেকনাফের আত্মীয়দের বাড়িতে চলে আসার প্রবণতা রয়েছে। এটা তাই অংশ।
তিনি জানান, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। দ্বীপে ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র মানুষদের আশ্রয় নেয়ার জন্য নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করছেন। দ্বীপের মানুষদের ওখানে আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
দ্বীপের জনপ্রতিনিধি খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, দ্বীপের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। স্কুল, হোটেল ও রিসোর্টগুলো আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা। এরই মধ্য ট্রলারযোগে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়েছেন দেড় হাজারের মতো বাসিন্দা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান বলেন, প্রশাসন মানুষজনের নিরাপত্তায় সর্ব্বোচ সজাগ রয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষের জীবন রক্ষা সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শঙ্কিত না হয়ে মানুষজনের সচেনতার বিকল্প নেই।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কক্সবাজারের পরিস্থিতি তেমন পরিবর্তন হয়নি। সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হলেও দুপুরের পর থেকে স্বচ্ছ রোদ এবং তাপদাহ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক। যারা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে পাহাড়ের উপরে ও পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তারা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেবেন। এর জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের নিকটবর্তী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছুদ্দৌজা নয়ন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি বিষয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছ। সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার সব ধরনের প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগে সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছ্বাসেবক, রেডক্রিসেন্টসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, পুলিশ সেখানে সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি মেডিক্যাল টিম ও মোবাইল মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তাৎক্ষণিক কাজ করবে ‘সাইট ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ’।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছুদ্দৌজা নয়ন আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গা শিবিরের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরিভাবে সরবরাহের জন্য ত্রিপল, বাঁশ ও সুতলি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
সমুদ্র সৈকতের পানিতে পর্যটককে নামতে নিষেধাজ্ঞা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পানিতে পর্যটকসহ সকলকে নামতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। দুপুর ২টা ৪০ থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত মাঝারি মানের বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা রয়েছে। এরপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তবে কোনো প্রকার বাতাসের পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়নি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, মোখার প্রভাবে মাঝারি মানের এই বৃষ্টিপাত। তা থেমে থেমে আবারো হতে পারে।
শুক্রবার বিকেল ৪টার পর থেকে সৈকতে ঘুরা-ফেরা করা পর্যটক সহ কাউকেও পানিতে নামতে দিচ্ছে না সৈকতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লাইফ গার্ড, বীচ কর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী আবদুস সালাম জানিয়েছেন, ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারির পর থেকে প্রশাসনের নিদের্শনা মতে কাউকে পানিতে নামতে দেয়া হচ্ছে। সাগর স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে ক্রমাগত উত্তাল হতে শুরু করেছে। তা আরো বাড়তে পারে। সার্বিক নিরাপত্তা সৈকতে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তাদের সাথে বিচকর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজারের আকাশে কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি ও আবার কখনো রোদের খেলা চলছে। শুক্রবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত মাঝারি মানের বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর আকাশ কালো মেঘে ঢাকা থাকাকালিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতও হয়েছে কিছুক্ষণ। কিন্তু বিকাল ৪ টার পর থেকে হালকা রোদের দেখা মিলেছে।