দীর্ঘ ১০ মাসের বিরতি ভেঙে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার কমলাপুরে দুটি প্রীতি ম্যাচের প্রথমটিতে নেপালের মুখোমুখি হবে সাবিনা খাতুনরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে তাদেরকে হারিয়েই সাফের শিরোপা জিতেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
সেই সাফল্যের পর এই প্রথম যখন মাঠে নামবে সাবিনারা, তখন দলটার মধ্যে অনেক বদল ঘটে গেছে। সেই সময়ের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন নেই। সিরাত জাহান স্বপ্না, আঁখি খাতুন, সাজেদা খাতুন, আনুচিং মগিনির মতো খেলোয়াড়রা গেছেন অবসরে।
অবধারিত ভাবেই নারী দলে নতুনের ছড়াছাড়ি। মোট ৬ জন খেলোয়াড় প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। যাদের মধ্যে আছেন ‘জাপানি কন্যা’ মাতসুশিমা সুমাইয়া। যার মা জাপানি ও বাবা বাংলাদেশি।
গোলাম রব্বানী দায়িত্ব ছাড়ায় এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ডাগ আউট সামলাবেন মাহবুবুর রহমান লিটু। দীর্ঘ সময় যিনি ছোটনের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। আপাতত এই দুই ম্যাচর জন্যই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সাফজয়ী দলের স্বপ্না, সাজেদা, আঁখি, আনুচিং অবসর নেওয়ায় এবারের দলে নেই। এছাড়া সামছুন্নাহার জুনিয়ার খেলতে পারছেন না জ্বরের কারণে। তাদের জায়গায় সুমাইয়া ছাড়াও দলে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন আফঈদা খন্দকার প্রাপ্তি, শাহেদা আক্তার রিপা, আকলিকা খাতুন, সুরমা জান্নাত ও স্বর্ণা রানী।
দীর্ঘ বিরতির পর খেলতে নামাটা চ্যালেঞ্জিং সব সময়। সাবিনাদের জন্য সেই চ্যালেঞ্জের চেয়েও বড় পরীক্ষা গত কিছুদিনের ঘটনা প্রবাহ ভুলে নিজেদের সেরাটা দেওয়া।
কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু অবশ্য বললেন তার মেয়েরা শুধু তৈরেই না, ক্ষধার্থও। তার কথায়, ‘অনেক দিন আমরা খেলতে পারছিলাম না। আমিও যেমন ক্ষুধার্থ, মেয়েরাও তেমনই। সবাই অনেক পরিশ্রম করেছে। আশা করি একটা ভালো ম্যাচ হবে।’
ছোটন পরবর্তী সময় নিয়ে লিটু বলেন, ‘প্রত্যেক পরিবারে দুঃসময় আসে। আমাদের একটা ক্রাইসিস মোমেন্ট চলছিল। সেটা আমরা চেষ্টা করছি কাটিয়ে ওঠার জন্য। যে শূন্যতা আছে, আশা করি বাফুফে সেটা পূরণ করবে। বিদেশি কোচ আনার চেষ্টা চলছে বলে জানি। আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে এক সুতায় বাধার জন্য।’
এই দুই ম্যাচে মেয়েদের খেলার দর্শনেও কোনো বদল আসবে না বলে জানালেন লিটু। বলছিলেন, ‘আমাদের ফিলোসফির পরির্তন হয়নি। আগে যেভাবে খেলতাম, সেভাবেই খেলব আমরা। আমাদের দর্শনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন গেল কিছুদিনের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে বলেন, ‘বাস্তবতাটা মানতে হবে। ছোটন স্যারকে অবশ্যই মিস করব। তবে দলের বর্তমান যে পরিস্থিতি আছে, সেটা খুব খারাপও না। পেশাদার খেলোয়াড়দের কাছে এই পরিবর্তনটা একটা পার্ট।’
তবে সাবিনা এটাও স্বীকার করে নিলেন, ‘আমার জন্য একটু কঠিন হবে। যেহেতু কিছু গুরুর্তপূর্ণ খেলোয়াড় নেই।’
সহঅধিনায়ক মারিয়া মান্দা বলেন, ‘অনেক দিন পর আমরা দুটি ম্যাচ পেয়েছি। সাফের পর আমরা কোনো ম্যাচ খেলিনি। আমরা চেষ্টা করবো ভালো ফল উপহার দেওয়ার।’
সাবিনা-মারিয়াদের সে চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। তবে তাদের চ্যালেঞ্জ আরও আছে। চোট রয়েছে দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানী সরকার ও মাসুরা পারভীনের। কৃষ্ণার প্রথম ম্যাচটা খেলা হচ্ছে না বলেই দল সূত্রে খবর। যতদূর জানা গেল জাপানি কন্যা সুমাইয়ার অভিষেকও হয়ে যাবে এ ম্যাচে। বদলি হিসেবে মাঠে নামবেন এই ফরোয়ার্ড। কোচ লিটুকে আস্থা রাখতে হবে রিপা-প্রান্তিদের ওপরও। জাতীয় দলে নতুন হলেও রিপা-প্রাপ্তিরা বষয়ভিত্তিক পর্যায়ে খেলেছেন অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
বাংলাদেশের স্কোয়াড
রুপনা চাকমা, স্বর্ণা রানি মন্ডল, সাথী বিশ্বাস, মাসুরা পারভীন, মোছা. সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার প্রান্তি, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, আনাই মগিনি, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, সোহাগী কিসকু, স্বপ্না রানি, ঋতু পর্ণা চাকমা, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া, সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, তহুরা খাতুন, শাহেদা আক্তার রিপা, মোছা. আকলিমা খাতুন ও মাতসুশিমা সুমাইয়া।