লের রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ক্রিয়াশীল দলগুলোকে বাদ দিয়ে অখ্যাত দলকে নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের নেতারা। তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না পাওয়া দলগুলো জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবে। একইসঙ্গে তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারি দলের সুপারিশ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়নি।
সোমবার (১৭ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নিবন্ধন না পাওয়া ১০ দলের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ১০ দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএলডিপি’র চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী, গণঅধিকার পরিষদের অপর অংশের নেতা ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল, ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি আশিক বিল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান নিজ নিজ দলের নিবন্ধন না পাওয়ায় ইসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির কথা জানান৷ পরে অন্যরাও তাতে মত দেন৷
নুরুল হক নুর বলেন, সরকার ইসলাম বিদ্বেষী নানা কর্মকাণ্ড করছে, আলেম-ওলামাদের ওপর অত্যাচার করেছে৷ তারা এখন ভোটের আগে ধর্মভিত্তিক কিছু দলকে কাছে টেনে নিতে চায়৷ আগামী ২৬ জুলাই নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর বিষয়ে গেজেট জারি করবে৷ তার আগে আমাদের নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও করতে হবে৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত বছরের ২৬ মে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর ১০ ‘এ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৯৩টি দল নির্ধারিত সময় আবেদন করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।
পরে বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায় যে, নিবন্ধন প্রাপ্তির জন্য যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে পেরেছে মাত্র ৭-৮টি দল৷ কিন্তু রহস্যজনকভাবে আমরা দেখলাম, নির্বাচন কমিশন সেই ৭/৮টির মধ্য থেকে কিছুটা অদল-বদল করে মোট ১২টি দল প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে বলে তালিকা প্রকাশ করে। নাম প্রকাশ করার পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সেই দলগুলো নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়৷ সেসব রিপোর্টে দেখা যায়, কোনও কোনও দলের অফিসের অস্তিত্ব নাই, উল্লেখযোগ্য কোন তৎপরতা নাই, এমনকি প্রদত্ত ঠিকানায় অফিসও নাই। নির্বাচন কমিশন গত ১ বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের নোটিস দিয়ে আবার কোথাও কোথাও আচমকা ভিজিট করে আমাদের দলগুলোর কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা-উপজেলা অফিস পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনের নামে তারা যেভাবে আমাদের তৃণমূলে অফিসের দলিল, সাইনবোর্ড, আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাতে মনে হয়েছে তারা যেন রাজনৈতিক দল নয় বরং আসামিদের তালিকা হাল-নাগাদ করছেন৷
তিনি ইসির সমালোচনায় বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করার জন্য এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়৷
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে নিবন্ধন আবেদন করেছিলাম। আমরা জানি, বাংলাদেশের এই নির্বাচন কমিশনের বিন্দুমাত্র নিরপেক্ষতা নাই। সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে।
মান্না বলেন, দেশবাসীর চোখে চোখ রেখে মিথ্যা ভাষণ, ভুয়া বক্তব্য ও উন্নয়নের মিথ্যা ফানুস উড়ানোর এক ভয়ঙ্কর অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছে ফ্যাসিস্ট শাসকরা। এর বিরুদ্ধে দেশের সকল অধিকার সচেতন মানুষ একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রই টিকবে না।