সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া বাংলাদেশ ষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে ২০১৫ সিরিজ
এই তো কিছু কিছুদিন আগের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে সালটি ২০১৫ বলেই আলাদা করে বলার কিছু নেই। সেবছরটি স্বর্ণালী এক বছরই কেটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাই কেন, সেবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে প্রথম বারেরমত কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে শুধু জয়ই শুধু, ঐ বছর ৩-০ ব্যবধানে হেয়াইটওয়াশও করেছিল বাংলাদেশ। তারপর গেলবছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দূর্দান্ত এক নতুন বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব। ইংল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে সেমিফাইনালেও খেলে মাশরাফি-তামিমরা। ওয়ানডেতে তারপর হঠাৎই ছন্দপতন। মাতমের সেই ধারাবাহিকতা চলছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবার পর ওয়ানডেতে ভালো করাই প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের। তবে কিম্বার্লিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ সেঞ্চুরির পরও দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত পারফরমেন্সের মুখে অসহায় আত্মসমর্পন করে বাংলাদেশ। টেস্টের মত আত্মাহুতির মিছিল ছিলনা ব্যাটসম্যানদের, তবে বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ে লজ্জার রেকর্ড সঙ্গী হয় ডায়মন্ড ওভালে। আজ সেই দলটির বিপক্ষেই সিরিজে ফেরার মিশনে মাশরাফি বাহিনী। তবে সেটা কতটা আশা দেখাবে তা নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন।
ইনজুরি আর টিম ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে ক্রিকেটারদের অন্তঃকলহ প্রতিদিনই ছড়াচ্ছে দাবানলের মত। এর জেরে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকেও গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হলো ‘মিডিয়াতে যা রটছে তা সত্যি নয়’। ম্যাচের আগে যেখানে বাংলাদেশ দলের অবস্থা, চোটাক্রান্ত ক্রিকেটোরদের খবর জানাতে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে এমন একটি সংবাদ সম্মেলন বিষয়টিকে ‘যা রটে তার কিছু তো বটে’ হিসেবেই মনে করতে চাইছেন অনেকে। এমন দোলাচলের মাঝেও আজকের ম্যাচ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেছে টিম বাংলাদেশ। একটি জয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরা মাশরাফি-সাকিবরা এবার যে আরো বড় পরীক্ষার মুখোমুখি!
ঊরুর পেশিতে ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। এরপর ফিজিওর পরামর্শে কিম্বার্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডেতেও খেলেননি তিনি। আর তামিমের পরিবর্তে সেই ম্যাচে ওপেন করেছিলেন ইমরুল কায়েস এবং উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। তামিমের অনুপস্থিতিতে অবশ্য খুব একটা খারাপ খেলেননি এই দুই ব্যাটসম্যান। উদ্বোধনি জুটিতে তারা ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও তামিম থাকলে আরো ভালো সূচনা পেতে পারতো বাংলাদেশ তা বলাই বাহুল্য। তবে আশার কথা হচ্ছে ইতিমধ্যে অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠেছেন তামিম। জানা গেছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলার জন্য প্রস্তুতও তিনি। আগামীকালের ম্যাচে তাই তামিমের খেলার জোর সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে অবশ্য সাইড লাইনে বসতে হতে পারে ইমরুল কায়েসকে। আর তামিমের সাথে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে লিটন কুমার দাসকে। তবে দীর্ঘদিন থেকে ব্যর্থতার বেড়াজালে আবদ্ধ থাকা সৌম্য সরকার যে দ্বিতীয় ম্যাচেও সুযোগ পাচ্ছেন না তা মোটামুটি নিশ্চিত।
এদিকে তামিমকে একাদশে রাখা হলে পরিবর্তন আসতে পারে ব্যাটিং অর্ডারেও আগের ম্যাচে তামিম না থাকায় বড় ভিত গড়ার লক্ষ্যে ওয়ান ডাউনে অর্থাৎ তিন নম্বরে নামানো হয়েছিলো টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। কিন্তু পার্লে তামিম ফিরলে চিরাচরিত ব্যাটিং অর্ডারেই খেলবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে তিন নম্বরে বরাবরের মতোই ব্যাটিংয়ে নামতে দেখা যেতে পারে হার্ডহিটার সাব্বির রহমানকে।
এরপর যথাক্রমে ব্যাটিংয়ে নামবেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম এবং মিস্টার ফিনিশার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। অপরদিকে সাকিব খেলবেন তাঁর আগের পজিশন পাঁচ নম্বরে। অবশ্য টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে সাকিবকে তিন নম্বরেও খেলাতে পারে। তেমনটি হলে আগের ম্যাচের মতো পার্লেও সাব্বির খেলবেন ছয় নম্বর পজিশনে। তবে টিম ম্যনেজমেন্ট চাইলে তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে খেলাতে পারে অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে।
পরিবর্তন আর পরিবর্ধনে যখন গুছিয়ে উঠছে বাংলাদেশ দল, ঠিক তখনই কপালে পড়েছে চিন্তার আরেক ভাজ। ভেন্যু! দক্ষিণ আফ্রিকার ‘অখ্যাত’ ভেন্যুগুলোই কি বাংলাদেশকে দিয়ে পরিচিতি বাড়ানোর চিন্তা করছে প্রোটিয়ারা? এমন প্রশ্ন ওঠে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের ভেন্যুটিতে চোখ বুলালেই। ২১ বছর আগে তৈরি হওয়া বোল্যান্ড পার্ক নামে পরিচিত এই মাঠে এখন পর্যন্ত ১০ টি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠটি খুলেছিল তা প্রায় ৪ বছর ৯ মাস আগে। তবে নিয়মিতই হয় ঘরোয়া ম্যাচ। সেই পার্ল ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই প্রথমবারের মত খেলবে মাশরাফিরা।
টাইগার বোলারদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে এই মাঠ। কেননা পিচে সবুজ ঘাস নেই বললেই চলে। বাতাস আছে কিছুটা; তবে বৃষ্টি না হলে বলে সুইং পাবে না বোলাররা। তবে উইকেটে কিছুটা বাউন্স পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গতকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস শুরু হয়েছে ভেন্যু এলাকাজুড়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম ওয়ানডে হেরে ইতোমধ্যে তিন ম্যাচ সিরিজে পিছিয়ে পড়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজে টিতে থাকতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই টাইগারদের সামনে। এমন লক্ষ্য লক্ষ্য নিয়েই দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে মাশরাফির দল। পক্ষান্তরে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ন বিপরীত সমীকরণ নিয়ে আজ দু’দলের লড়াইয়ে পাল্লাটা কার দিকে বেশি ভারী হয় সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে পিছিয়ে পড়লেও ঘুড়ে দাঁড়ানোর মত অসম্ভব চ্যালেঞ্জ নিতে সদাই প্রস্তুত থাকে মাশরাফির দল। যেমনটা ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি ৮ উইকেটে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়েছিলো মাশরাফি-মুশফিকুররা। সেখান থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে যথাক্রমে ৭ উইকেটে এবং ৯ উইকেটে জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। তাই অতীত থেকে সাহস যোগানার কাজটা সেড়ে নিতে পারে টাইগাররা। এমনটা হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যোগ হবে আরও একটি অর্জন।