• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যাপক সারা, লাভবান হচ্ছেন কৃষক

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৪

মাঠের পর মাঠ সরিষার ক্ষেত। হলুদে হলুদে ভরে গেছে মাঠ। আর মধু চাষীরাও ব্যস্ত সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে। রাজশাহীর প্রায় সমস্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ইতোমধ্যে খাঁচা পদ্ধতিতে চাষকৃত মৌ মাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যাপক সারা ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির মধু চাষের কারণে পরাগায়ন ঘটছে ফসলের এতে সরিষারও ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এটি একটি উইন উইন গেম। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে। মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরিষার মৌসুমে কাঠের বিশেষ ধরনের বাক্সে মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে পোষা মৌমাছির মৌবাক্স। সকালে মধু সংগ্রহের জন্য খোলে দেয়া হয় মৌবাক্সগুলো। মৌমাছিরদল সরিষা ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু আহরণ করছে। আর প্রতি সপ্তাহে একবার মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা। মেশিনের মাধ্যমে মধু সংরক্ষণ করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করেন। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এই মধু রাজশাহী জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন সরবরাহ হচ্ছে দেশ ও বিদেশের মাটিতে।

গোদাগাড়ী উপজেলার হাতনাবাদ গ্রামের মধু চাষি সুমন আলী ২০১৩ সাল থেকে সরিষা ক্ষেতে মধুচাষ করছেন। তিনি বরাবরের মতো এবারও আশা করছেন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধু বিক্রি করবেন। সুমন জানান, রাজশাহীর বিসিক এলাকা থেকে মধু সংগ্রহরে বক্স তৈরি করে আনেন। এরপর মধু সংগ্রহের ট্রেনিং নিয়ে চাষ করা শুরু করেন। এবারও ৫০টির বেশি বক্স বসিয়েছেন। গড়ে প্রতি সপ্তাহে তিনি আড়াই মন মধু সংগ্রহ করছেন।

চারঘাট উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ায় মৌচাষ করছেন মো. মমিন, নারায়ণ মন্ডল, হৃদয় মন্ডল, রুবেল, আলিম। মৌ চাষি মো. মমিন বলেন, নাটোর এলাকা থেকে রানি মৌমাছি সংগ্রহ করে এবার ২০টি বক্সে মধু চাষ করছি। প্রতিটি বক্সে ৫টি করে চাক আছে। এগুলো থেকেই গতবার ভালো আয় হয়েছে। এবারও ভালো লাভের আশা করছেন তারা।

গোদাগাড়ী এলাকার বাসুদেবপর বিলে মধু সংগ্রহ করছেন মজিদ আলী। তার বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুরে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রতিটি বক্স থেকে সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৫ কেজি মধু উৎপাদন হয়। সরিষা চাষের সময় আমাদের মূল সময়। এই সময়েই বেশি মধু উৎপাদন হয়। এছাড়া লিচু, ধনিয়া ও কালোজিরা চাষের সময় মধু উৎপাদন হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার গড়ে প্রতি কেজি পাইকারি দরে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করি। আর স্থানীয়দের কাছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।

মমিন বা সুমনই নয়, রাজশাহীতে এখন অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন মধুচাষি মধু চাষ করছে। কম খরচে মধু উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। এতে করে ভাগ্য বদল ও সাবলম্বী হচ্ছেন অনেক বেকার তরুণরাও। একদিকে বাণিজ্যিক এই মধু আহরণে মৌ চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন পাশাপাশি বাড়ছে সরিষা উৎপাদন।

মধু চাষিরা বলেন, আমাদের এখনকার উৎপাদিত মধুগুলো ২১ থেকে সাড়ে ২২ গ্রেডের হওয়ায় স্থানীয় ও মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধু বিক্রি হয়।

রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার প্রথমিক পর্যায়ে সরিষার জমিতে সাড়ে ৩ হাজারের অধিক মধু চাষের বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব বক্স থেকে ৪৩ হাজার কেজি মধু উৎপাদন হতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মৌ চাষি এসে মধু সংগ্রহ করছেন। এদিকে মৌ চাষ শুরু হওয়ার পর সরিষার ফলন বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪ মণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে আমরা সরিষা চাষ বাড়িয়েছি। কারণে মৌ বক্সও বাড়ছে। অনেক চাষিরা জমির পাশে বসতে দিতেন না। আমরা তাদের মটিভেশন করেছি। মধু চাষের কারণে সরিষারও ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এটি একটি উইন উইন গেম। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মধু চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা। কিছু প্রবীণ মধু চাষিও আছে। কম খড়ছে লাভজনক এই চাষের কারণে এতে তরুণরা ঝুঁকছেন এবং সাবলম্বী হচ্ছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ