• শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

কৃষিমন্ত্রীকে লতিফ সিদ্দিকীর হুমকি রাজ্জাককে আমি পেটাব, কত বড় নেতা হইছে…

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৪

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। কালিহাতীর রাজনীতিতে কৃষিমন্ত্রীর প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাঁকে উদ্দেশ করে অসৌজন্যমূলক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘রাজ্জাককে আমি পেটাব। কত বড় নেতা হইছে। আমার টাকায় লেখাপড়া কইরা, ওয়ান-ইলিভেনে সংস্কারবাদী হইছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলে মাফ করিয়েছি। বেইমানের বাচ্চা, ঘুষ খেয়ে টাকা হইছে না। ওর টাকা আমি … ঢুকামু, ও তো আমারে চিনে না।

গত মঙ্গলবার নির্বাচনী সহিংসতা মামলার আসামিসহ তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তার করলে তাদের মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীকে নিয়ে কালিহাতী থানার সামনে সড়ক অবরোধ করেন। এতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের কালিহাতীতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় সড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। এ সময় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া তাঁর প্রায় দুই মিনিটের বক্তব্য ভাইরাল হয়। এ নিয়ে জেলায় চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

ওই দিন তাঁর ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের মধ্যস্থতায় দু’জন এজাহারভুক্ত আসামিকে রেখে অন্য চারজনকে পুলিশ ছেড়ে দিলে অবরোধ তুলে নেন তারা। এতে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু হয়। গতকাল বুধবার এজাহারভুক্ত আসামি দুই অনুসারীও আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর রাস্তা অবরোধের খবর শুনে আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মালেক ভূঁইয়া, কালিহাতী পৌর মেয়র নুরন্নবী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করতে থানার দিকে আসতে থাকেন। সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে এ পক্ষকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘কালিহাতীর মাটি রাজ্জাকের ঘাঁটি’ বলে স্লোগান দেয়। স্লোগান শুনে লতিফ সিদ্দিকী আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন কে কে লাঠি নিয়ে এসেছিল তাদের নাম তালিকা করে রাখতে। তিনি বলেন, কালিহাতী পৌরসভার মেয়র নুরুন্নবীর সঙ্গে আমার অন্য খেলা আছে।

টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা পান কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। তিনি প্রায় ৩২ বছর ধরে সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর মনোনয়নের পেছনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। নির্বাচনে তাঁকে বিজয়ী করার জন্য কৃষিমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ করেন লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোশারফ হেসেন সিদ্দিকী ঝিন্টু।

লতিফ সিদ্দিকীর অপর অনুসারী বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী অভিযোগ করে বলেন, মোজহারুল ইসলাম মন্ত্রীর আত্মীয়। তাঁকে জয়ী করার জন্য নানা কূটকৌশল করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, কালিহাতী আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীর হাতে গড়া। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এ কারণে তাদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন মন্ত্রী। এ কারণে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, কোনো সম্মানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম অসম্মানজনক কথা কেউ বলতে পারে না। কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লতিফ সিদ্দিকী যা বলেছেন তা শিষ্টাচারবহির্ভূত ও বিবেক বিবর্জিত। কাউকে অসম্মান করে নিজে সম্মান পাওয়া যায় না। তিনি জামায়াত-বিএনপির ঘাড়ে ভর করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কালো টাকা ছড়িয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করেননি। প্রভাব বিস্তার করলে তো আমি জয়ী হতাম।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি বলেন, একজন সাবেক মন্ত্রীর অপর এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন কুরুচিহীন বক্তব্য কেউ আশা করে না। বৃহত্তর রাজনীতির স্বার্থে দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ