• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে’ তিন সন্তানের মুখে বিষ ঢেলে নিজেও খেলেন

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪

‘আমি মারা গেলে আমার বাচ্চারা সকলের অযত্ন-অবহেলায় বেঁচে থাকবে। কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে যেতে চাই। এই দুনিয়া আমার কাছে এখন ভারি হয়ে উঠেছে। আমি আর এই দুনিয়ায় থাকতে চাই না। আমার মেয়েদেরও রাখতে চাই না। এত জ্বালাতন আর সহ্য করতে পারি না। এতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কোনো দোষ নেই।

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসব কথা বলেন পলি বেগম নামের এক গৃহবধূ।

জানা যায়, পারিবারিক কলহের জেরে তিন কন্যাসন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পলি। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার দেড় বছর বয়সী মেয়ে মীমের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে, গতকাল বিকেলে সন্তানদের মুখে বিষ ঢেলে নিজেও বিষপান করেন ওই গৃহবধূ।

পলি বেগম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার লঙ্কাচর গ্রামের টিটু মোল্লার স্ত্রী। এ ঘটনায় গুরুতর অবস্থায় তাদের ৮ বছরের মেয়ে আফসানা ও আড়াই বছরের আমেনাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দশ বছর আগে কাশিয়ানী উপজেলার লংকারচর গ্রামের হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে টিটু মোল্যার সঙ্গে একই খাগড়াবাড়ি গ্রামের শরিফুল শেখের মেয়ের পলি বেগমের বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

বিয়ের পরে বিভিন্ন সময় পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া হলে শাশুড়ি পলিকে মানসিক নির্যাতন করতো। মঙ্গলবার পলি শাশুড়ির উঠানে জ্বালানি (গাছের পাতা) শুকাতে দেয়। এ নিয়ে শাশুড়ি গালমন্দসহ পলির বাবার একাধিক বিয়ে (৯টি) নিয়ে নানা বাজে মন্তব্য করেন।

এতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে তিন কন্যাসন্তানের মুখে বিষ ঢেলে নিজেও পান করেন পলি। পরিবারে লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪ জনকে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে দেড় বছর বয়সী মীমের মৃত্যু হয়। আর অপর দুই শিশুকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

পলি বেগম জানান, তার স্বামী টিটু মোল্লা বাড়িতে থাকেন না। মেয়েদের নিয়ে তিনি গ্রামে থাকেন। শাশুড়ি বিভিন্ন সময় তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল।

পলির স্বামী টিটু মোল্লা বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। তিন মেয়েকে নিয়ে আমার স্ত্রী বাড়িতে থাকে। প্রায়ই মা পলিকে নির্যাতন করত বলে জানাত।

‘গতকালও মা পলিকে নির্যাতন করেছে বলে মুঠোফোনে জানায়। পরে জানি, আমার স্ত্রী তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে সেও পান করেছে। ছোট মেয়েটা মারা গেছে।’- বলেন তিনি।

শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবিকুন নাহার বলেন, মঙ্গলবার রাতে মা ও তিন মেয়েকে শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে, আজ সকালে ছোট মেয়েটার মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে, দুই শিশুকে খুলনা রেফার্ড করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পার না যাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না তারা আশঙ্কামুক্ত।

কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে মা বিষ খেয়েছে, এমন ঘটনা আমাদের জানা নেই। আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত পরিবারের কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ