মিয়ানমারের রাখাইনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এতদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করেছিল। গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি বেড়েছে। গুলির বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ। এ কারণে সেখানকার বাসিন্দারা ভয়ে আছেন। ভীতিকর পরিস্থিতিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
সর্বশেষ শুক্রবার রাত ৯টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। নিয়মিত বিরতিতে শোনা যাচ্ছিল বিকট বিস্ফোরণের শব্দ। কয়েকদিন শান্ত থাকার পর গত মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের এই সীমান্ত। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে।
সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তারা। মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে কিছুক্ষণ পরপর গুলির শব্দ আসছে। নিয়মিত বিরতিতে শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। এতে এপার কেঁপে উঠছে।
শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা নাছির উদ্দীন বলেন, রাত ৯টার পর থেকে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ভারী গোলার শব্দ শুনছি। এখনও গোলাগুলি চলছে। গোলার শব্দে কেঁপে উঠছে আমার ও আশপাশের বাড়িঘর।
মনে হচ্ছে নাফনদে এসে পড়ছে গোলা। একটানা আধা ঘণ্টা, এরপর এক ঘণ্টা গোলার শব্দ শুনেছি। রাত ১২টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে বাড়িতে বসে আছি। পরিবারের সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।
একই কথা বলেছেন শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। রাত ৯টার পর থেকে গোলার শব্দ আসছে। আমরা সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছি।
ভারী গোলার শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, শুক্রবার দিনের বেলায় গোলার শব্দ শোনা না গেলেও রাত ৯টার পর থেকে শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন আমাকে। তাদের নির্ভয়ে থাকতে বলেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তের কিছু অংশে ইতোমধ্যে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি। তাদের সামনে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
এদিকে, এখনও মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ৯ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশকালে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এর আগে চলতি মাসে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছিল সীমান্তে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কোস্টগার্ড চট্রগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. তাহসিন রহমান বলেন, ওপারে চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতিতে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদে টহল জোরদার রেখেছি। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছি। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।