• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

সীমান্তে ব্যাপক গুলির 

সীমান্তে দিয়ে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরো ২১ জান্তা সদস্য,

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪
ছবি সংগৃহীত

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সেই দেশের জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। রাখাইনের অভ্যন্তরে সঙ্ঘাত ভয়াবহ রূপ নেয়ায় একের পর এক সীমান্তরক্ষীদের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। তাতে উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশেও।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস ধরে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দখলে থাকা অনেক শহর ও এলাকা বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়ন দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

মিযানমারের সেনাদের তাড়া খেয়ে যদি আরাকান আর্মিও বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তাহলে সেটা সংকটের ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। সীমান্তের এত কাছে যখন সঙ্ঘাত চলে, তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে সীমান্তে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ভয় কাজ করে।

মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু জেলা শহর থেকে টহলে বের হওয়া দুই শতাধিক জান্তা বাহিনীর সদস্যের ওপর আরাকান আর্মির কমান্ডো হামলার পর পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। পালিয়ে আসা ১৭৯ জান্তা সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরস্থ ১১ বিজিবির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ মার্চ) বিকেল থেকে তাদের মানবিক কারণে সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ে জান্তা সদস্যদের অবস্থানের কারণে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।

এদিকে সোমবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত (গুলিবিদ্ধ) ইউপি সদস্য সাবের হোসেনের কোমরের পেছনের অংশ থেকে ১টি বুলেট বের করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎিসক শাহ আলম এ বুলেট বের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের মেম্বার সাবের হোসেন।

তিনি বলেন, বুলেটটি বের করার পর তার প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছে। অপারেশন পেছনে হওয়ায় কষ্ট বেড়েছে তার। এছাড়াও অর্থ সংকটে ওষুধ কিনতেও পারছেন না তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের গুলিতে বাংলাদেশ সীমান্তের এপারের বাসিন্দাদের গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ও নিহত হলেও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ। জামছড়ি সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, মঙ্গলবার সকালেও ওপারের রাণী এলাকায় গোলাগুলির ব্যাপক শব্দ জামছড়ি ও আশারতলী গ্রামে শুনতে পেয়েছেন। তারা কাঠ কাটতে যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে এ শব্দ শোনেন। পরে তারা ভয়ে বাড়ি ফিরে যান।

এদিকে পালিয়ে আসা জান্তা সদস্যদের একজনের নাম টুয়ো মং। তার বয়স ৪২ বছর। তিনি জানান, ১০ মার্চ বিকেলে তারা ২ শতাধিক সেনা সদস্য বিদ্রোহী দমনে টহলে বের হন। তারা বলিবাজার জান্তা বাহিনীর তাদের সতীর্থ সেনা ব্যাটালিয়নে ১১ মার্চ রাত যাপন করার কথা ছিলো। কিন্তু পথিমধ্যে বিদ্রোহী সশস্ত্র আরাকান আর্মির কমান্ডোরা অতর্কিত তাদের টহল দলের ওপর হামলা শুরু করলে তারা পাল্টা হামলা করেন। রাণী ও অংচাপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার গহীন বনে এ ঘটনা ঘটায় তারা কঠিন সমস্যায় পড়েন। পরে তাদের উপরস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলে উপরের নির্দেশে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

২০০ সদস্যের ১৭৯ জন বাংলাদেশ সীমানা পার হলেও বাকি ২১ সদস্য এখনো বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে লুকিয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তারা যে কোনো সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসবেন বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে স্কুলের বেঞ্চ সরিয়ে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সদসস্যদের বিছানা সাজানো হয়েছে। অসুস্থদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো এ সময়।

একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার এদের দুপুরের খাবারের তালিকায় বিরিয়ানি ও মুরগীর গোসত ছিলো। গত সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জান্তা সরকারের মোট ১৭৯ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জারুলিয়াছড়ির আগা ও জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৩ দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে সোমবার দুপুরের পর পর ২৯ জনকে এবং রাতে ১৫০ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে নিয়ে আসা হয়। যাদের মধ্যে আহত ৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া অন্যান্যদেরকেও খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসন ও বিজিবি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের ১১ বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিপির ১৭৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ১৭৯ মিয়ানমারের জান্তা সদস্যদের নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চালানো হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতণ চাকমা বলেন, ১১ বিজিবি অধিনায়কের প্রস্তাবেই তাদেরকে বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সেই কারণে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বুধবার থেকে যে কয়দিন তারা থাকবে সে পর্যন্ত হয়তো এভাবেই থাকবে। আগামী ১০ রমজানের পর রমজান উপলক্ষে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিলো। আবার ১১ মার্চ বাংলাদেশে পালিয়ে আসলো আরো ১৭৯ জন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ