তীব্র দাবদাহ পুড়ছে সারাদেশ। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও দাবি করছে দপ্তরটি।
চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা থেকে বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাঠে কৃষিকাজ করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জাকির হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত জাকির দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার সীমান্ত সংলগ্ন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেন ছেলে। তিনি পেশায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন।
নিহতের বাবা আমির হোসেন জানান, ‘রোদ গরমে মাঠের ধান মরার অবস্থা। ধানের জমিতে সেচ (পানি) দেয়ার জন্য জাকির সকাল ৭টার দিকে মাঠে যায়। মাঠে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর খবর পাই সে মাঠে স্ট্রোক করেছে। মাঠে থাকা অন্য কৃষকরা তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।’
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান জানান, শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ এবং বেলা ১২ টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ। বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রির ঘরে দাঁড়ায়।
পাবনা: পাবনায় হিট স্ট্রোকে সুকুমার দাস নামের (৫৮) নামের এক জন মারা গেছেন। শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে শহরের রুপকথা রোডে একটি দোকানে বসে চা পানরত অবস্থায় স্ট্রোক করেন। সুকুমার দাস শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবা প্রয়াত পূর্ণ চন্দ্র দাস। স্থানীয়রা জানান, সুকুমার দাস দুপুরে একটি চা স্টলে গিয়ে চা পান করছিলেন। এ সময় তিনি হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যান। আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জাহিদুল ইসলাম ওই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুকুমার দাস হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন কিনা চিকিৎসকরা নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ হিট স্ট্রোক হয় গরমে থাকলে। তিনি ছিলেন একটি দোকানে। এ সময় তিনি চা পান করছিলেন। তাকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। তার মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহ ধরে পাবনায় প্রচন্ড দাবদাহ বইছে। সপ্তাহজুড়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী বা তার আশেপাশে ঘোরাফিরা করছে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ছিল ৩৯ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা, বুধবার (১৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তার আগেরদিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আগামী সাতদিন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
অপর দিকে তীব্র দাবদাহের কারণে সারাদেশে তিন দিন হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল শুক্রবার এটি জারি করা হয়। আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার থেকে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এ সময় সবাইকে গরম থেকে বাঁচতে সতর্কতার সঙ্গে চলার নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।