সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে এবং সাধারণ সম্পাদকের ঘোষনাকে তোয়াক্কা না করে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা প্রশাসনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ম ধাপে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান তার ছেলে সাখোয়াত হোসেন সজলকে সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভাই এড. মিনহাদুজ্জামান লীটনকে সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। এ নিয়ে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারন করতে পারে। ঘটতে পারে বড় ধরনের অঘটন।
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী করেছেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। তাদের পক্ষে ভোট করতে দলীয় নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তার এই ঘোষনায় দুই উপজেলার তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল আরও প্রকট আকার ধারন করেছে।
আগামী ৮মে ওই দুই উপজেলায় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং সংসদ সদস্যের ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী করায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন বলে তৃণমুল নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেছে।
এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মন্টু বলেন, একক আধিপত্য বিস্তার করতে সংসদ সদস্য তার ছেলে ও ভাইকে দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল আরও প্রকট আকার ধারন করবে। সেই সাথে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার পরেও তিনি ওই পদ থেকে ছেলে ও ভাইকে সরিয়ে নেননি। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় সংসদ সদস্যের নিকটজন ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনে ভরা। তার পরিবারের সদস্যরা ঠিকাদারি সহ নদীর বালু বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। এবার উপজেলার পদটি তার প্রয়োজন। এ কারনে তিনি আওয়ামীলীগের কোন পদে না থেকেও তার ছেলেকে উপজেলায় প্রার্থী করেছেন। শুধু তাই নয় সোনাতলায় তার ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি সাহাদারা মান্নান আমার বিরোধীতা করেছিলেন। তার এ ধরনের কর্মকান্ডে নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সবাই ক্ষুব্ধ। আর এর প্রতিবাদ করতেই আমি প্রার্থী হয়েছি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল তারিক বলেন, এমপি ক্ষমতাকে পরিবার কেন্দ্রিক করার জন্য ছেলে ও ভাইকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। আমরা এটা মেনে নেবো না।
সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, এমপি কৌশলে তার ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। দলীয় কোন্দল ও তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছেন।
সোনাতলা মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি দবির হোসেন বলেন, এমপি মান্নানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি তার ভাইকে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দিগদাইড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, এমপি সাহাদারা মান্নান সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী করেছেন।
এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিনহাদুজ্জামান লীটন বলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে এবং দলীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও এমপি পুত্র সাখোয়াত হোসেন সজল বলেন, দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ দলীয় কাজ করে আসছি।
এখন আমি আরও এগিয়ে যেতে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। এতে করে উন্নয়ন ও উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, আমি আমার ছেলেকে প্রার্থী করিনি। দলীয় সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে সে প্রার্থী হয়েছে। এতে আমার কোন ইঙ্গিত কিংবা নির্দেশনা ছিলনা।