• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন

গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা, জব্দ ২৬ হাজার কনটেন্ট

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের বাংলাদেশের মূলহোতা এবং তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস রিকোভারী টিম। তাদের কাছ থেকে ছবি ও ভিডিওসহ ২৬ হাজার পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম জব্দসহ এক শিশু ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরুফে টিপু কিবরিয়া এবং তার সহযোগী মো. কামরুল ইসলাম ওরফে সাগর।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসিপ্রধান জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফখরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধশতাধিকের বেশি বই রয়েছে যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

তিনি আরও জানান, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়ান টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। ‘একশো এক’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করে। একই সঙ্গে সাহিত্য চর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরোনো পথেই হাঁটতে শুরু করে টিপু কিবরিয়া।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিটিটিসি জানায়, টিপু কিবরিয়া ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট বানান। তিনি নিজে গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক বেশে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য কিছু অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজের বাসায় ডেকে এনে তার নিজের ক্যামেরার সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গের ছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। নিজের বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপঝাড়ে এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো থেকে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভিকটিম হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

এই অশ্লীল ছবিগুলো বিভিন্ন নিষিদ্ধ ও পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করেন তিনি। এই ওয়েবসাইটগুলো থেকেই টিপু কিবরিয়ার আপলোড করা ছবিগুলো দেখে অনেক বিকৃত রুচির ব্যক্তিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা টিপু কিবরিয়ার কাছে ছেলে শিশুদের বিভিন্ন রকমের অশ্লীল ছবির চাহিদা দেন এবং টিপু কিবরিয়া অর্থের বিনিময়ে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে তাদের চাহিদা চরিতার্থ করেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার সময় টিপুর বাসায় তার ব্যবহৃত ডেস্কটপটি পরীক্ষা করে দেখা যায় সে MEGA এবং Totanota নামক দুইটি এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে তার ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির নাগরিকসহ প্রায় ২০/২৫টি Totanota ও MEGA আইডি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যারা এসব আইডি দিয়ে মূল হোতা টিপু কিবরিয়ার সাথে শিশু পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন কনটেন্ট-এর জন্য যোগাযোগ করতো।’

তিনি আরও বলেন, তার ব্যবহৃত ক্যামেরা, পিসি ও ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রাথমিকভাবে শিশু পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা প্রায় ২৫ হাজার স্থির চিত্র ও প্রায় ১০০০ ভিডিও কনটেন্ট পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ