মার্চ থেকে এপ্রিল, অনেকদিন বৃষ্টির দেখা নেই। তাপদাহের তীব্র গরমে পুড়ছে দেশ, পুড়ছে মানুষ। নাজেহাল মানুষ অসহায় অবস্থায় প্রার্থনা করছেন বৃষ্টির জন্য। দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে। আর সব থেকে বেশি বিপদে ‘বাংলাদেশের হিটওয়ে গেট’ খ্যাত চুয়াডাঙ্গা। জেলার মানুষ যেনো তাপ চুল্লিতে বন্দি। নিরুপায় জনজীবন ও প্রাণীকুল।
চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসের ৯ দিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবারও জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ সএপ্রিল) দুপুরে তাপমাত্রা ছাড়ায় আগের সব রেকর্ড। তাপমাপার মিটারের পারদ ছুঁয়ে ফেলে ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলার মানুষ ভ্যাপসা গরম ও তাপদাহ থেকে বাঁচতে রীতিমতো অসহনীয় কষ্ট করছে। খেটে খাওয়া মানুষ বাইরে বের হতে পারছে না। ব্যাহত হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে সোমবার, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।
গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল অতি তীব্র এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরমধ্যে ১৬ এপ্রিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ এপ্রিল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০ এপ্রিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ এপ্রিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২২ এপ্রিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২৯ এপ্রিল এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর ৩০ (এপ্রিল) দেশের এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ২০১৪ সালের পর রেকর্ড।
৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে।
এ অবস্থায় উত্তাপ থেকে বাঁচতে নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাধা না দেয়া, উন্মুক্ত ও প্রয়োজনীয় জলাধার এবং ব্যাপকভাবে সবুজায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশে মে মাসে গরমের দাপট যে বেশি থাকে। ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।