মহান আল্লাহ তা’আলা বৈচিত্র্য দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মানুষকে। কাউকে সম্পদশালী করেছেন আবার কাউকে করেছেন দীনহীন। কাউকে বেশি মেধা দিয়েছেন, কাউকে দিয়েছেন কম। কেউ বাস করছে সমাজের উচ্চস্তরে, তো কেউ নিম্নস্তরে। বাহ্যত মানুষে মানুষে মেধা-সম্পদ-সম্পত্তির পার্থক্য দেখা গেলেও, আমরা একে-অপরের মুখাপেক্ষী। একজনের প্রয়োজনে আরেকজনকে সহযোগিতার দরকার হয়। কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
আমাদের সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারা অন্যের অধীনে কাজ করেন, বিশেষ করে কায়িক শ্রম নির্ভর যারা, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। তাদের অধিকার আদায় হয় না ঠিকমতো। মজুরি মেলে না ঠিকঠাক, পেটের দায়ের সুযোগ নিয়ে কম মজুরিতে অতিরিক্ত খাটানো হয় শ্রমিকদের। শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার এই চিত্র শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী। অথচ ইসলাম সমাজের-উঁচু-নিচু, জাতপাতের ভেদাভেদ, বৈষম্য কখনোই প্রশ্রয় দেয় না।
সবসময় শ্রমিক বা অধীনস্ত কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছেন আল্লাহর রাসূল (সা.)। যারা শ্রমিকের অধিকার আদায়ে অবহেলা করে তাদের সর্তক করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কঠিন শাস্তির।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করছে, তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে, তা থেকে তাদের খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে, তা তাদের পরিধান করতে দেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অপর এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘তোমরা অধীনস্তদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদের কোনো রকমের কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জানো না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথাদানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করো না।’ (বুখারি)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘মজুরদের সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করবে না। অগত্যা যদি তা করাতে হয়, তবে নিজে সাহায্য করো।’ (বুখারি)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো শ্রমিককে এমন কোনো দুঃসাধ্য কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, যা তাকে অক্ষম ও অকর্মণ্য বানিয়ে দেবে।’ (বুখারি)
শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করার পরিণাম সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে স্বীয় দাস-দাসীকে (শ্রমিককে) প্রহার করবে, কিয়ামতের দিন তাকে তার পরিণাম ভোগ করতে হবে।’ (বায়হাকি)
শ্রমিকের মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্বনবী। তিনি বলেছেন, ‘মজুরকে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)