• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

শাক-সবজিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭

দেশে উত্পাদিত শাক-সবজি ও ফলমূলে অতিমাত্রায় এবং অসময়ে কীটনাশক বা বিষ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়িতেছে। প্রকট হইতেছে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। খাবারের সহিত সেই বিষ যাইতেছে পাকস্থলিতে। আর এই বিষযুক্ত খাবার খাইয়া অনেকে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হইতেছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াইয়াছে যে, কৃষকরা সকালে বিষ দিয়া বিকালে সবজি বাজারজাত করিতেছেন। পোকা দমন করিতে না পারিয়া তাহারা বিষের মাত্রা বাড়াইয়া দিতেছেন। মূলত হাইব্রিড জাতীয় শাক-সবজি ও ফলমূলেই কৃষকদের বেশি পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাইতেছে। চলতি বত্সরের জানুয়ারি এবং মার্চে পরিচালিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির রাসায়নিক ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল দূষণ পরীক্ষার প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাভুক্ত সবজিগুলিতে প্রায় ৩০ শতাংশ কীটনাশকের প্রভাব থাকিয়া যায়। আরো উদ্বেগের ব্যাপার হইল—সালাদ হিসাবে বা কাঁচা মরিচের ন্যায় সরাসরি খাওয়া যায়, এমন সবজিতে প্রায় ৫০ শতাংশের মত বিষের প্রভাব শনাক্ত করা হইয়াছে।

দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপরীতে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি বলিয়া প্রতীয়মান হয়। এই ক্ষেত্রে শাক-সবজি চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই হইল সবচাইতে বড় একটি বাধা। তাই ফসল রক্ষায় কৃষকরা পরিণাম না ভাবিয়াই কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার করিয়া থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সকল বালাইনাশকই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। সবজিতে থাকা অবশিষ্ট বিষের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টি ঝাপসা হইয়া যাওয়া, চুলকানি, বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, হাঁপানি এমনকি হূদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার এবং কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা থাকে। উপরন্তু কিছু কিছু কীটনাশকের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিংবা বন্ধ্যা হইবারও ঝুঁকি থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে থাকে মৃত্যুর ঝুঁকিও। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর তথ্যমতে, এই ধরনের বিষক্রিয়ায় ২০০৯ সালে ধামরাইয়ে ৩ জন এবং ২০১৩ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪ জন শিশুর মৃত্যু হইয়াছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে এই ধরনের বিষক্রিয়ায় প্রতি বত্সর প্রায় দুই লক্ষ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়, যাহার অধিকাংশই হইল উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক।

তবে ক্ষতির আশঙ্কা যতই থাকুক না কেন, শাক-সবজি উত্পাদনে বালাইনাশক ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হইলে কৃষি উত্পাদনে ব্যাঘাত ঘটিতে পারে। তাই বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বনই হইল সর্বোত্তম পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে বিষক্রিয়ার স্থায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন বালাইনাশকের ক্ষেত্রে তাহা বিভিন্ন রকম হইতে পারে। কোনোটি প্রয়োগের এক দিন পরই সবজি তোলা যায়। আবার কোনোটিতে বিষের প্রভাব ২১ দিন পর্যন্ত থাকিয়া যায়। সুতরাং বাজারজাত করিবার বিষয়টি মাথায় রাখিয়াই সবজিতে সময়মাফিক সঠিক বালাইনাশক ব্যবহারে উদ্যোগী হইতে হইবে। উপরন্তু সবজি খাইবার পূর্বেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তন্মধ্যে উন্নত বিশ্বে ব্যবহূত এই ধরনের বিষ প্রতিরোধক পদ্ধতি একটি বিকল্প হইতে পারে। কিংবা ভালো করিয়া বেশ কয়েকবার পানিতে ধৌত করিয়া বা প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পানিতে ডুবাইয়া রাখিয়া তাহার পর এই সবজি খাওয়া যাইতে পারে। মনে রাখিতে হইবে, সতর্কতাই হইল নিজেকে রক্ষা করিবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ