লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি॥
রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার হাটবাজারগুলোতে গবাদিপশু জবাই এবং মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি বিধি নিষেধ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। কসাইখানা থাকার পরেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগাক্রান্ত গরু, মহিষ, ছাগল জবাই করা হচ্ছে। কোন কোন সময় সড়কের উপরও জবাই করা হয় গবাদি পশু। কোনরূপ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই গবাদিপশু জবাই করে নোংরা পরিবেশে রেখে ক্রেতাদের এসব মাংস গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি জনস্বাস্থ্যে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। অভিযোগ উঠেছে সরকারি বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মচারীদের সাথে হাত করে কসাই ও মাংস বিক্রেতারা প্রতিদিন এ অনিয়ম করে যাচ্ছে। অথচ সরকারি বিধান আছে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে কোন পশু জবাই করতে হলে সেটি জবাই করার আগে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত কিনা এবং মাংস স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা একজন সরকারি পশু ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। পরীক্ষা করা পশু জবাই ও খাওয়ার উপযোগী বিবেচিত হলে তবেই সেটি অনুমোদিত কোন কসাইখানায় নিয়ে জবাই করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক মাংসের উপর সীল মেরে তা বাজারে বিক্রির অনুমতি প্রদান করবে। কিন্তু রামগঞ্জ পৌরসভা সহ উপজেলার কোথাও এর কোনটিই মানা হচ্ছে না। এছাড়া বাছুর, চাষাবাদযোগ্য বলদ ও দুধেল গাভী জবাই না করার নির্দেশও উপেক্ষা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তবে শোনা যায়, এসব দেখার কাজে নিয়োজিতরা নিয়মিত মাংস বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। আর তাই এরা গবাদি পশু জবাইয়ের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকাই পালন করে থাকে। সরকারি বিধি মোতাবেক যারা মাংস বিক্রয় করবে তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সনদপত্র নেওয়ার কথা। উপজেলার কয়েকটি হাটবাজারের মাংসের দোকানে সরজমিনে গিয়ে বিক্রেতাদের সাথে স্বাস্থ্যসনদ সর্ম্পকে কথা বলে জানা যায় কোন মাংস বিক্রেতাই ‘স্বাস্থ্য সনদ’ নেওয়ার বিষয়ে জ্ঞাত নয়। এমনকি জবাইয়ের আগে পশু পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার বিষয়টিও অনেকেরই অজানা। গবাদি পশু জবাই এবং মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে জীবানুমুক্ত করা, খোলা মাংস বিক্রি না করা এবং মাংসের দোকানে স্যানিটেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাটবাজারগুলোর কোন মাংস দোকানেই তা মানা হচ্ছেনা।
বরং সকালে জবাই করা পশুর মাংস সারাদিন উন্মুক্তস্থানে নোংরা পরিবেশে ঝুলিয়ে রেখে বিক্রি করা হয় রাত পর্যন্ত। সরকারি নিয়মমাফিক পশু জবাই হচ্ছে কিনা, জবাইকৃত পশুটি খাওয়ার উপযোগী কিনা তা তদারকি করার জন্য প্রতিটি এলাকায় একজন করে পশু ডাক্তার, একজন করে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এবং চামড়ার মান দেখার জন্য একজন অভিজ্ঞ কিউরেটর নিয়োগের নিয়ম থাকলেও রামগঞ্জ উপজেলার কোথাও এদের দেখা পাওয়া যায়না। সরকারি নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন সোম ও বৃহস্পতিবার মাংস বিহীন দিবস ঘোষিত হলেও রামগঞ্জের সর্বত্রই কসাইরা প্রতিদিন গবাদিপশু জবাই করছে। শহরের যত্রতত্র রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা লাইসেন্স বিহীন মাংসের দোকান গুলোসহ রামগঞ্জ বাজার, সোনাপুর বাজারও অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের সাথে মহিষের মাংস ও টাটকা মাংসের সাথে বাসি মাংস মিশিয়ে এবং বকরী কিংবা পাঠার মাংসকে খাসীর মাংস হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ শোনা গেলেও এসব ব্যাপারে কোন তদারকি দেখা যায়নি।
এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে মাংস ক্রেতারা। পশু জবাই ও মাংস বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে থাকা আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় উপজেলার যত্রতত্র, রোগাক্রান্ত ও স্বাস্থ্যহীন গবাদিপশু গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি নির্বিঘেœ জবাই করা হচ্ছে। ফলে শুধুমাত্র পরিবেশ বিপর্যয় নয় মানুষের শরীরেও রোগব্যাধি বেড়েই চলেছে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ বাজারের মাংস বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ মোছুয়ার সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাংস বিক্রয়ের তার লাইসেন্স রয়েছে। তিনি সহ কয়েক জন মাংস বিক্রেতা রামগঞ্জ কসাইখানায় সুস্থ্য-সবল গবাদি পশু জবাই ও মাংস বিক্রয় করেন। তবে অনেক কসাই মাংস বিক্রয়ের লাইসেন্স না নিয়ে সরকারি নিয়ম না মেনে যেখানে সেখানে গরু-ছাগল জবাই করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে মাংস বিক্রয় করে আসছে। পৌর স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ আলমগীর কবির বলেন, পৌর কসাইখানা থাকার পরেও দুই একজন ব্যতিত অন্যরা সরকারের বিধি-নিয়মকে উপেক্ষা করে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করতে শুনেছেন। তিনি এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।