ইরান রেভ্যুলুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্স প্রধান ইসমাইল কানি অক্ষত আছেন। তবে তাকে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা লঙ্ঘনের তদন্তে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। একাধিক সূত্রের বরাতে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল-ইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রায় তিন দশকের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর থেকে কানিকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
এরপর থেকে নিজেদের ভেতরে গোপন শত্রু থাকার সন্দেহ করতে থাকে তেহরান। হিজবুল্লাহর নেতৃস্থানীয়দের গতিবিধি, নাসরাল্লাহর অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে কীভাবে ইসরায়েলের অবগত হলো, সে রহস্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু হয়। হিজবুল্লাহ ও রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তেহরান, বৈরুত ও বাগদাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশটি সূত্র জানিয়েছেন, কানি ও তার দলের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রেখেছেন তদন্তকারীরা। ২০২০ সালে কুদস ফোর্সের তৎকালীন প্রধান কাশেম সোলায়মানি মার্কিন হামলায় নিহত হন। এরপর দলটির দায়িত্ব নেন ইসমাইল কানি।
গেল দুমাসে, ইরান সমর্থিত ‘প্রতিরোধের অক্ষের’ (অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স) একাধিক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। নিহতের তালিকার অধিকাংশই হিজবুল্লাহ সামরিক শাখার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। ৪ অক্টোবর হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ এক ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলায় নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাশেম সাফেইদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এরপর থেকেই ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক বক্তব্যে বলেছেন, সাইফেদ্দিনকে ‘সরিয়ে দেওয়া’ হয়েছে।তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পর বলেছেন, সাইফেদ্দিনের মৃত্যু এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। মিডল-ইস্ট আই এর সূত্রদের বরাতে জানা গেছে, নাসরাল্লাহর মৃত্যুর দুদিন পর রেভ্যলুশনারি গার্ডের কয়েকজন কমান্ডারের সঙ্গে কানি বৈরুতে আসেন। তারা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন।
তবে সাইফেদ্দিনের ওপর হামলার পর থেকে তার সঙ্গে দুদিনের জন্য সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে তারা জানিয়েছেন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে ক্রমাগত ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে প্রাণ না হারালেও অন্তত মারাত্মক আহত হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে জল্পনা কল্পনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তবে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, হামলার সময় সাইফেদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন না কানি। কুদস ফোর্স প্রধান বেশ বহাল তবিয়তেই আছেন।
এদিকে, কুদস ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার ইরাজ মাসজেদি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কানি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তিনি প্রাত্যহিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অবশ্য, ইরান, ইরাক ও লেবাননের আট ব্যক্তি দাবি করেছেন, কানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ইরানের ঘনিষ্ঠ একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার মিডল-ইস্ট আইকে বলেছেন, ‘ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের মধ্যে ইসরায়েলিদের অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে তেহরানের ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। বিশেষত লেবাননের মাটিতে যারা দায়িত্বরত রয়েছে তাদের দিকেই সন্দেহের তীরটা বেশি। তাই সবাইকেই এখন জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘এখনই অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত এখনও চলমান আছে।