হিন্দু ধর্মের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। এদিকে পূজা উপলক্ষে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিশেষ কালেকশন নিয়ে এসেছে ফ্যাশন হাউজগুলো। যেসব ক্রেতা ভারতে যেতে পারেননি, তারা বাংলাদেশের স্থানীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ থেকে নিজেদের পছন্দমতো কেনাকাটা করছেন।
পূজা উপলক্ষে কাপড়ের মার্কেট ও শোরুমগুলোতে নারীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রংয়ের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি- শার্ট, প্যান্ট। তাছাড়াও জুতার দোকানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের জুতা। রয়েছে বাচ্চাদের বাহারি পোশাক।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিনে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট ও মৌচাক মার্কেটে ঘুরে দেখা যায় দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো পূজাকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন নিয়ে এসেছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পূজার কেনাকাটা শুরু হয় মূলত পূজা শুরু হওয়ার ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে। এখন মূলত ক্রেতারা শেষ সময়ের কেনাকাটা করছেন। অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি নতুন জামা, জুতা, গহনা, ইত্যাদি কেনার হিড়িক পড়ে যায়। তবে বিশেষ করে মহালয়া থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত টানা দশ দিন নানা আয়োজনে সেজে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল থেকে স্থানীয় বাজার।
বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় শিশুদের দোকানগুলোতে চলছে কেনাবেচা। মার্কেট ঘুরে দেখা যায় কেউ শাড়ি কিনছে, কেউ পাঞ্জাবি, কেউ আবার কিনছে জুতা। প্রায় সবার হাতেই ছিল শপিং ব্যাগ। প্রতিটি দোকানেই ছিল ক্রেতা।
বসুন্ধরা শপিং মলের শো-রুমের ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। আজকে যে ক্রেতা এসেছে তার ৮০ শতাংশ পূজা উপলক্ষে কিনতে এসেছে। তবে আগে যেমন ছুটির দিন ছাড়াও অন্য দিন বিক্রি হতো এখন তেমন হয় না।
যমুনা ফিউচার পার্কের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি; এর ফলে মানুষ পোশাক কম কিনছে। তবে বিক্রি মন্দের ভালো বলা যায়।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, পূজার জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতি থাকে। গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, ক্রেতারা বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পোশাকের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। আমরা একটু একটু করে আয়োজনটা বাড়িয়েছিলাম। সেই সূত্রে এবারও আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আমরা কিছুটা শঙ্কিতও ছিলাম। তবে আমাদের আগাম প্রস্তুতি থাকায় এবং মানুষের চাহিদামতো পণ্যে বৈচিত্র্য থাকায় আমাদের আয়োজন ক্রেতারা পছন্দ করেছেন। তুলনামূলক সন্তোষজনক বেচাকেনা ছিল।
ফ্যাশন হাউজ কে-ক্রাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান বলেন, গত দুই মাসের অস্থিরতা কেটে ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের বেচাকেনা শুরু করতে পেরেছে যা আমাদের সামগ্রিক খাতের জন্য ইতিবাচক।
এদিকে ধানমন্ডি হকার্স, চাঁদনী চক ও গাউছিয়ার বেশিরভাগ শাড়ি দোকানদার ক্রেতাদের সময় দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের পূজার বাজারে নারীদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। কাতান, জর্জেট, সিল্ক ও এমব্রয়ডারি দিয়ে কাজ করা শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়িরও।
নিউ মার্কেটের ইমিটেশনের গয়নার দোকানগুলোতেও চলছে ধুম বিক্রি। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, গলার হার, আংটিসহ নানা রকম অলঙ্কার। পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের জুয়েলারি, সিঁদুর, চুড়িসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানিরা।
পূজার বেচাকেনা নিয়ে রাজধানীর শাঁখারি বাজারের দীপ বিশ্বাস বলেন, দাম মোটামুটি ঠিকই আছে। সরকার পরিবর্তনের কারণে দামের তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। মোকাম থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছে।
পূজা সামনে রেখে ডিজিটাল বাজারগুলোও সরব হয়েছে। অনলাইনে চলছে নানা পোশাকের প্রচারণা, সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান ব্যবসায়ীরা।